নারী-পুরুষ এক সাথে জামাআত আদায় করা যাবে কিনা?

প্রশ্নোত্তর: নারী-পুরুষ এক সাথে জামাআত আদায় করা যাবে কিনা?

প্রশ্ন: কিছু দিন পূর্বে মসজিদে পরপর দুটি ঘটনায় দেখেছি, জামাতের পর বারান্দায় পুরুষদের কাতারের সামনেই বা পেছনে ২-১ জন মহিলা নামায আদায় করছেন। এটি মসজিদের পরিবেশ ও আদবের পরিপন্থী মনে হয়েছে। প্রশ্ন হলো, এমনভাবে মহিলাদের নামায আদায় করা শরীয়তের দৃষ্টিতে সঠিক কি না? বিষয়টি জানালে উপকৃত হবো।

উত্তর:
মহিলাদের জন্য ঘরের মধ্যে পর্দার সঙ্গে নামায আদায় করাই সবচেয়ে প্রিয়, অধিক ফজিলতময় এবং তাদের ইজ্জত ও সম্মান রক্ষার জন্য সর্বোত্তম। যদিও হজ ও ওমরার ক্ষেত্রে বিশেষ বিধান রয়েছে, কিন্তু সাধারণ অবস্থায় মসজিদে গিয়ে পুরুষদের সাথে জামাতে অংশ নেওয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে নিরুৎসাহিত।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু)-এর কাছে মহিলাদের মসজিদে গিয়ে নামায আদায় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন:

ما مصلّى لامرأةِ مِنْ خير بَيْتِهَا
অর্থাৎ, মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম নামায হলো, যা তারা ঘরের নিজ কক্ষে আদায় করে।

বর্তমান সময়ে ফিতনা ও অনৈতিকতার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ইসলামে মহিলাদের মসজিদে গিয়ে পুরুষদের সঙ্গে জামাতে নামায আদায় করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শরীয়তের বিভিন্ন ফতোয়া গ্রন্থে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য ফতোয়া:

ফতোয়ায়ে সিরাজিয়া:
اما فى زماننا فلا تحضر الا ناث المساجد
অর্থাৎ, আমাদের বর্তমান যুগে মহিলাদের মসজিদে উপস্থিত হওয়া উচিত নয়।

ফতোয়ায়ে দুররুল মুখতার (আল্লামা আলাউদ্দীন হানাফী):
يكره حضورهن الجماعة ولو لجمعة وعيد على المذهب المفتى به لفساد الزمان
অর্থাৎ, মহিলাদের জন্য পঞ্চগানা নামায, জুমা বা ঈদের জামাতে উপস্থিত হওয়া ফিতনা-ফ্যাসাদের কারণে মাকরূহে তাহরিমা। এটি হানাফি মাযহাবের চূড়ান্ত ফতোয়া।

ফাতহুল কাদীর (ইমাম ইবনুল হুম্মাম হানাফী):
بل عمم المتاحرون المنع للعجائز والشّواب فى الصلوات كلها لغلبة الفساد فى سائر الاوقات
অর্থাৎ, হানাফি ফকিহগণ যুবতী ও বৃদ্ধা উভয় ধরনের মহিলাদের জন্য সব নামাযের জামাতে অংশগ্রহণ ফিতনার কারণে নিষিদ্ধ করেছেন।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি , মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করাকে নিরুৎসাহিত করার মূল কারণ হলো তাদের সম্মান রক্ষা ও সম্ভাব্য ফিতনা থেকে বিরত রাখা। বর্তমান সময়ের বাস্তবতা বিবেচনায়, ঘরে নামায আদায় করাই শরীয়তের দৃষ্টিতে উত্তম ও নিরাপদ। বিস্তারিত জানতে মাসিক তরজুমান (জিলহজ্ব ১৪৩৭/সেপ্টেম্বর ২০১৬) থেকে প্রাসঙ্গিক প্রবন্ধ পড়ার পরামর্শ রইল।

Leave a Comment