হযরত মরিয়ম (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-এর অলৌকিক জন্ম কাহিনি
হযরত মরিয়ম (আ.) একদিন নিজের কক্ষে একাকী বসে ছিলেন। এমন সময় হযরত জিব্রাইল (আ.) সুস্থ সবল মানব আকৃতিতে তাঁর সামনে উপস্থিত হন। মরিয়ম (আ.) হঠাৎ অপরিচিত ব্যক্তি দেখে অবাক হয়ে বললেন, “তুমি কে? কেন এসেছ? আল্লাহকে ভয় কর। আমি আল্লাহর কাছে তোমার থেকে পানাহ চাচ্ছি।”
হযরত মরিয়ম ও হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর অলৌকিক ঘটনা
জিব্রাইল (আ.) বললেন, “ভয় করো না। আমি আল্লাহর দূত। তোমাকে একটি পবিত্র সন্তান দান করার জন্য এসেছি।”
মরিয়ম (আ.) বললেন, “কীভাবে সম্ভব? আমার তো এখনো বিবাহ হয়নি, কোনো পুরুষও আমাকে স্পর্শ করেনি।”
জিব্রাইল (আ.) বললেন, “এটা আল্লাহর ইচ্ছা। তিনি বাপ ছাড়া সন্তান সৃষ্টি করতে সক্ষম। এটি হবে আল্লাহর রহমতের নিদর্শন ও জনগণের জন্য একটি শিক্ষা।” এরপর জিব্রাইল (আ.) মরিয়ম (আ.)-এর বুকের খোলা অংশে ফুঁ দিলেন, এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি গর্ভবতী হয়ে গেলেন।
অলৌকিক গর্ভধারণ ও প্রসব
লোকসমাজের ভয়ে হযরত মরিয়ম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে একটি নির্জন স্থানে চলে যান। প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে তিনি একটি শুকনো খেজুর গাছের নিচে আশ্রয় নেন এবং বললেন, “হায়, এর আগে যদি মারা যেতাম এবং স্মৃতি থেকে মুছে যেতাম!”
আরো পড়ুন :
- প্রতিদিনের ইসলামিক গল্প – অকালের ফল
- হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) ও মলকুল মউত
- উত্তম চরিত্র নিয়ে ইসলামিক উক্তি এবং হাদিস
- প্রতিদিনের ইসলামিক গল্প – নেকড়ে বাঘের সাক্ষ্য
এ সময় অদৃশ্য থেকে আওয়াজ এলো, “হে মরিয়ম! চিন্তা করো না। তোমার নিচে একটি নদী প্রবাহিত হয়েছে। খেজুর গাছটি নাড়াও। এতে পাকা খেজুর পড়বে। ফল খাও, পানি পান কর, এবং নবজাত শিশুকে দেখে সান্ত্বনা লাভ কর।”
হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম ও প্রথম কথা
হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্মের পর মরিয়ম (আ.) নবজাত শিশুকে নিয়ে কওমের কাছে ফিরে যান। কুমারী মরিয়মের কোলে সন্তান দেখে লোকেরা বিস্মিত হয়ে বলল, “হে মরিয়ম! তুমি তো বড় অন্যায় করেছ। তোমার মা-বাবা তো এরকম ছিলেন না।”
মরিয়ম (আ.) কোনো কথা না বলে শিশুটির দিকে ইশারা করলেন। লোকেরা আরও রেগে গিয়ে বলল, “এ দুধপোষ্য শিশু কীভাবে কথা বলবে?”
তখন হযরত ঈসা (আ.) কথা বলা শুরু করলেন:
“আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দান করেছেন, নবী বানিয়েছেন, নামাজ ও রোজার নির্দেশ দিয়েছেন। আমাকে মায়ের প্রতি সৎ আচরণকারী বানিয়েছেন।” এ ঘটনা শুনে লোকেরা স্তব্ধ হয়ে যায়।
সবক:
- আল্লাহতাআলা সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। তিনি যেকোনো কিছু করতে সক্ষম।
- মাধ্যমের গুরুত্ব বোঝা যায়, যেমন জিব্রাইল (আ.)-এর মাধ্যমে মরিয়ম (আ.) সন্তান লাভ করেন।
- নবীগণ তাঁদের ভবিষ্যৎ দায়িত্ব সম্পর্কে পূর্বেই অবগত হন।
- আল্লাহর দান ও রহমতের নিদর্শন হিসেবে বিশ্বাস রাখা ঈমানের অংশ।
- মানবীয় রূপ ধারণ করা ফেরেশতারা আমাদের মতো মানুষ নন; তাঁদের মূল নূর অপরিবর্তিত থাকে।