প্রতিদিনের ইসলামিক গল্প – অকালের ফল
হযরত মরিয়ম আলাইহিস সালামের আম্মাজান গর্ভাবস্থায় মানত করেছিলেন যে, ওনার গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ট হলে ওকে আল্লাহর খেদমতে দিয়ে দিবেন। অতঃপর তাঁর একটি কন্যা সন্তান জন্ম হয়, যারনাম রাখা হয় মরিয়ম। তিনি তাঁর কন্যা সন্তানকে বায়তুল মুকাদ্দাসে নিয়ে গেলেন এবং মসজি দের খেদমতের জন্য ওখানে দিয়ে আসলেন। বায়তুল মুকাদ্দাসের মুতওয়াল্লীগণের মধ্যে হযরত যাকরীয়া আলাইহিস সালামও ছিলেন। তিনি মরিয়মের আপনজন ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিলেন মরিয়মের খালা। এ জন্য মরিয়মকে তাঁর প্রযত্নে রাখলেন। যাকরীয়া আলাইহিস সালাম মরিয়মের জন্য মসজিদে একটি আলাদা কামরা তৈরী করান এবং মরিয়রকে একান্তভাবে তাঁর জিম্মায় রাখেন। তিনি ব্যতীত ঐ কামরায় অন্য কেউ যেতে পারতো না। তিনি যখন বাইরে যেতেন, তখন কামরার দরজা বন্ধ করে যেতেন এবং বাইর থেকে এসে নিজেই খুলতেন। হযরত মরিয়ম আলাইহিস সালামের কারামত দেখুন, যাকরীয়া আলাইহিস সালাম যখনই কামরায় প্রবেশ করতেন, তখন সেই বন্ধ কামরায় হযরত মরিয়মের সামনে নানা রকম অকালের ফল মওজুদ দেখতেন। গ্রীষ্ম কালের ফল শীত কালে এবং শীত কালের ফল গ্রীষ্মকালে ওনার সামনে মওজুদ থাকতো। এ দৃশ্য দেখে যাকরীয়া আলাইহিস সালাম জিজ্ঞেস করলেন, হে মরিয়ম, এ বন্ধ কামরায় তোমাকে এ ফল কে দিয়ে যায়? এবং এ অকালের ফল কোথেকে আসে? মরিয়ম আলাইহিস সালাম বললেন, এটা আল্লাহর কাছ থেকে আসে, তিনি যাকে ইচ্ছা করেন, তাকে অগনিত প্রদান করেন।
আরো পরুন : প্রতিদিনের ইসলামিক গল্প – আল্লাহর নিদর্শন
হযরত যাকরীয়া আলাইহিস সালামের বয়স তখন পঁচাত্তর বছর থেকেও অধিক ছিল। মাথার চুল সাদা হয়ে গিয়েছিল, গলার আওয়াজ বসে গিয়েছিল এবং তাঁর কোন সন্তানও ছিলনা। তিনি চিন্তা করলেন যে আল্লাহতাআলা মরিয়মকে অকালের ফল দান করেন। তিনি চাইলে, আমাকেও এ বার্দ্ধক্য বয়সে আমার বন্ধ্যা স্ত্রীর গর্ভে সন্তান দিতে পারেন। এ ধারনায় মরিয়মের পাশে বসে দুআ করলেন, হে আল্লাহ, আমাকে তোমার কাছ থেকে একটি পুত পবিত্র সন্তান দান কর, নিশ্চয় তুমি দুআ কবুলকারী।
তাঁর এ দুআর পর হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম উপস্থিত হয়ে আরয করলেন, আল্লাহতাআলা আপনাকে এ সুসংবাদ দিয়েছেন যে আপনার ঘরে পুত্র সন্তান জন্ম হবে যার নাম হবে ইয়াহিয়া। (কুরআন শরীফ ও গারা ১২ আয়াত, রুহুল বয়ান ৩২৪ পৃঃ ১ জিঃ)
সবক: ওলীগনের কারামাত সত্য। মরিয়ম আলাইহিস সালামের সামনে অকালের ফল মণ্ডজ দে থাকাটা হলো ওনার কারামাত। যে জায়গায় আল্লাহওয়ালাগণ কদম রাখেন, ঐ জায়গা বিশেষ মর্যাদা লাভ করে। ঐ জায়গায় বসে যে দুআ করেন তা আল্লাহ তাআলা সহসা কবুল করেন। এ জন্য যে জায়গায় মরিয়ম আলাইহিস সালাম ছিলেন, ঐ জায়গায় বসে যাকরীয়া আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন এবং সেটা কবুল হয়ে গেল। আল্লাহতাআলার অবহিত করনের দ্বারা গর্ভস্থিত সন্তানের খবরও নবীগন লাভ করেন। যেমন আল্লাহ তাআলা যখন সুসংবাদ দিলেন যে, তোমার ঘরে ইয়াহিয়া জন্ম হবে, তখন যাকরীয়া আলাইহিস সালাম জেনে গেলেন যে তাঁর স্ত্রীর গর্ভে পুত্র সন্তান হবে।