হযরত আবু বকর রাঃ এর জীবনী রচনা পর্ব -০২

প্রতিদিনের ইসলামী পোস্ট - Get Study Online

হযরত আবু বকর রাঃ এর জীবনী রচনা পর্ব -০২

হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) জীবনী ও ঘটনা

এদিকে, আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বিষয়টি নিয়ে খুবই লজ্জিত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তিনি উমারের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) পেছনে ছুটে গিয়ে বারবার বলতে থাকেন, “ভাই উমার, দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন।” কিন্তু উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের বাড়ি চলে যান।

তবুও আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেমে থাকেননি। তিনি উমারের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বাড়ির দরজায় গিয়ে পৌঁছান। কিন্তু উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) দরজা খুলে মুখের উপর বন্ধ করে দেন। মন খারাপ নিয়ে আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) দ্রুত রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে চলে যান।

অন্যদিকে, কিছুক্ষণ পর উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-ও রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে উপস্থিত হন। উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে পুরো ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বর্ণনা করেন এবং স্বীকার করেন যে তিনি আবু বকরের (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

সব শুনে রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উমারের (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর ওপর অসন্তুষ্ট হন। এ সময় আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। তিনি বললেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ! দোষটা আমারই, উমারের (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর কোনো ভুল নেই।” আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) একাধিকবার চেষ্টা করেন উমারকে (রাদিয়াল্লাহু আনহু) নির্দোষ প্রমাণ করার।

(সহিহ বুখারি, হাদিস নং: ৪২৭৪)

সুবহানাল্লাহ! কী অসাধারণ চরিত্র, কী বিনয়, কী উত্তম আচরণ! তাঁরা ছিলেন সত্যিকার সোনার মানুষ। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাহচর্যে গড়ে ওঠা এই মানুষদের জীবন আমাদের জন্য কত বড় আদর্শ হতে পারত!

কিন্তু আমরা কতটা দুর্ভাগা! তাঁদের জীবন সম্পর্কে জানার চেষ্টা তো দূরের কথা, তাঁদেরকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতেও চিন্তা করিনি। তাঁদের জীবনী পড়লে চোখ দিয়ে পানি ঝরবেই। তাঁদের অন্তর ছিল স্বচ্ছ স্ফটিকের মতো, আর একে অপরকে ভালোবাসতেন শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।

তবে আমরা কেন এমন হতে পারলাম না? একই পথে চলছি, অথচ আমাদের মধ্যে এত হিংসা, বিদ্বেষ, ও শত্রুতা কেন? নিশ্চিত থাকুন, আখিরাতে এর জন্য কঠিন জবাবদিহি করতে হবে।

আসুন, সাহাবিদের জীবন থেকে শিক্ষা নেই।

আরো পড়ুন : প্রতিদিনের ইসলামিক গল্প – অকালের ফল

প্রশান্তিময় গৃহ: নবীজীর (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথম পদার্পণ

মহান আলোকিত রাসূল! তাঁর সঙ্গে সেদিন ছিলেন তাঁর প্রিয় সঙ্গী, হযরত আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। সেই দিনটি! যেদিন দয়ার নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তাঁর বিশ্বস্ত সাথী আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) মদিনায় পৌঁছেছিলেন।

তাঁরা পা রেখেছিলেন মদিনার কুবা পল্লীতে। চারপাশে কী এক শান্তি, কী এক স্নিগ্ধতার আবেশ। এক অপূর্ব মোহময় পরিবেশে যেন প্রকৃতিই কথা বলছিল। কুবা পল্লীর ধূলিকণা যেন সোনার মতো ঝলমল করছিল পূর্ণিমার আলোয়। রোশনীতে ভেসে যাচ্ছিল প্রতিটি পথঘাট, গলি আর প্রান্তর।

কে না চেনে কুবা পল্লীর নাম? মদিনা আর মক্কার প্রতিটি মানুষ চিনে কুবাকে। কারণ এই পল্লী ধারণ করে আছে এক উজ্জ্বল ইতিহাস—আলোর নবীজী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তাঁর সাথীর আগমনের স্মৃতি।

আল্লাহর পক্ষ থেকে যখন দয়ার নবীজী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হিজরতের অনুমতি পেলেন, তখন শুরু হলো সেই ঐতিহাসিক যাত্রা। এটি ছিল ইসলামের প্রথম হিজরত। রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ধীরপায়ে চলছিলেন মদিনার দিকে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিশ্বস্ত সাথী হযরত আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)।

হযরত আবু বকর রাঃ এর আত্মত্যাগ এবং ইসলামের প্রতি অবদান

রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছাড়তে চলেছেন তাঁর প্রিয় জন্মভূমি, মক্কা। সেই মক্কা, যেখানে তিনি জন্ম নিয়েছিলেন সাগরসম রহমত নিয়ে। যেখানে কেটেছে তাঁর শৈশব, কৈশোর আর যৌবনের দিনগুলো। প্রিয় মক্কাকে বিদায় জানাতে গিয়ে নবীজীর হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠল।

তিনি বারবার পেছনে তাকাচ্ছিলেন। স্মৃতি আর আবেগে তাঁর মন ভরে যাচ্ছিল। ভালোবাসার মক্কাকে ছেড়ে মদিনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কারণ এটাই আল্লাহর আদেশ। এটাই ছিল ইসলামের প্রথম হিজরত।

মদিনার উপকণ্ঠে সগৌরবে দাঁড়িয়ে ছিল ঐতিহ্যবাহী কুবা পল্লী। বহু আগে থেকেই কুবা পল্লী ছিল সুনাম ও খ্যাতির প্রতীক। রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং হযরত আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কুবা পল্লীতে পৌঁছে কিছুক্ষণ থেমে দাঁড়ালেন। তারপর…

(এর পরের অংশে কুবা পল্লীর ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও ঘটনা উল্লেখ করা যায়। যদি আরও যোগ করতে চান, জানাবেন।)

আরো পড়ুন : 

মহান মেজ্ববান: কুলসুম ইবনুল হিদম (রাদিয়াল্লাহু আনহু)
তারপর রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তাঁর সঙ্গী হযরত আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) প্রবেশ করলেন কুবা পল্লীর একটি অতীব সম্ভ্রান্ত ও খান্দানী বাড়িতে। সেই বাড়ির মালিক কে? কে সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি?

তিনি আর কেউ নন—হযরত কুলসুম ইবনুল হিদম (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বাড়ি অত্যন্ত পছন্দ করলেন এবং সঙ্গী আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-সহ সেখানে কাটিয়ে দিলেন টানা চারটি দিন।

চারদিন পর নবীজী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদিনার মূল ভূখণ্ডে পৌঁছালেন। মদিনায় তিনি অবস্থান করলেন আরেক সৌভাগ্যবান সাহাবী হযরত আবু আইউব আল আনসারীর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বাড়িতে। কিন্তু মদিনার পথে কুবায় এসে যে ব্যক্তি প্রথমবার রাসূলুল্লাহর (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মেহমানদারি করার গৌরব অর্জন করলেন, তিনি কুলসুম ইবনুল হিদম (রাদিয়াল্লাহু আনহু)।

কুলসুম (রাদিয়াল্লাহু আনহু) খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান। রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জন্য কী করবেন, কীভাবে বরণ করবেন, তা ভেবে তিনি যেন দিশেহারা হয়ে পড়েন। বাড়ির চাকর-বাকরদের ডেকে সব আয়োজন শুরু করলেন। এক চাকরের নাম ছিল নাজীহ। রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার নাম শুনে বললেন, “নাজীহ অর্থ সফলকাম। হে আবু বকর! তুমি সফলকাম হয়েছ।”

রাসূলের (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীদের মেহমানদারি
কুলসুম (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর বাড়ি শুধু রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর মেহমানদারিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সেখানে মক্কা থেকে আগত আরও সাহাবীরা অবস্থান করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু), সুহাইব (রাদিয়াল্লাহু আনহু), আবু মাবাদ আল মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু), যায়িদ ইবনে হারিসা (রাদিয়াল্লাহু আনহু), আবু মারসাদ কান্নায ইবন হিসন (রাদিয়াল্লাহু আনহু), আবু কাবশা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) প্রমুখ।

কুলসুমের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ইন্তেকাল
রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদিনায় থাকার সময় কুলসুম ইবনুল হিদম (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ইন্তেকাল করেন। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদিনায় আগমনের পর প্রথম ইন্তেকাল করা আনসার সাহাবী।

তাঁর বিদায় কষ্টের নয়; বরং তিনি খুশি ও প্রফুল্ল চিত্তে চলে যান, কারণ তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মেজ্ববান। তাঁর জীবনের এই সফলতা তাঁকে দুনিয়া ও আখিরাতে মহিমান্বিত করে তোলে।

সত্যিই, কুলসুম ইবনুল হিদম (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এক আশ্চর্য সফল মেজ্ববান।

Related posts

Leave a Comment