অযুর ফজিলত ও গুরুত্ব: পবিত্রতা, গুনাহ মোচন ও সওয়াব অর্জনের উপায়

অযুর ফজিলত ও গুরুত্ব: পবিত্রতা, গুনাহ মোচন ও সওয়াব অর্জনের উপায়

ইসলামে পবিত্রতার গুরুত্ব অপরিসীম। একজন মুসলমানের দৈনন্দিন জীবনে পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো অযু। এটি শুধুমাত্র নামাজের পূর্বশর্তই নয়, বরং আত্মিক ও শারীরিক পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমও বটে। অযুর মাধ্যমে শুধু শরীরের ময়লাই দূর হয় না, বরং গুনাহও মোচন হয়। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم অযুর ফজিলত সম্পর্কে অসংখ্য হাদিসে আলোচনা করেছেন, যেখানে উল্লেখ রয়েছে যে, প্রতিটি অযুর জলকণার সঙ্গে আমাদের গুনাহ ঝরে যায়। তাই একজন মুমিনের জন্য উচিত, প্রতিটি ইবাদতের পূর্বে বিশুদ্ধ নিয়তে অযু করা এবং এটি তার জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত করা। এই লেখায় আমরা অযুর ফজিলত, গুরুত্ব ও তার মাধ্যমে কীভাবে গুনাহ মোচন হয়, সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

অযুর ফজিলত ও গুরুত্ব: পবিত্রতা, গুনাহ মোচন ও সওয়াব অর্জনের উপায়

সুলতানে দো-আলম, নূরে মুজাস্সাম, শাহে বনী আদম, রাসূলে মুহ্তাশাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি দিনে ও রাতে আমার প্রতি ভালবাসা ও ভক্তি সহকারে তিনবার করে দরূদ শরীফ পাঠ করবে, আল্লাহ্ তাআলার উপর (নিজ বদান্যতায়) দায়িত্ব যে, তিনি তার ঐ দিন ও ঐ রাতের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।” (আল মুজামুল কবীর লিত তিবরানী, ১৮তম খন্ড, ৩৬২ পৃষ্ঠা, হাদীস-৯২৮)

হযরত ওসমান গণি رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ এর নবী-প্রেম

একদা হযরত সায়্যিদুনা ওসমান গণি রَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ এক জায়গায় পৌঁছে অযুর জন্য পানি চাইলেন এবং অযু করলেন আর আপনা আপনিই মুচকি হাসলেন। তারপর সঙ্গীদেরকে বললেন: “আপনারা কি জানেন! আমি কেন মুচকি হাসলাম?” অতঃপর তিনি নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বললেন:

একদা হুযুর পুরনূর صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এই জায়গায় অযু করেছিলেন এবং অযু শেষ করে তিনি মুচকি হেসেছিলেন এবং সাহাবায়ে কিরামদের عَلَیۡہِمُ الرِّضۡوَان উদ্দেশ্যে ইরশাদ করেন: “তোমরা কি জান, আমি কেন হেসেছি?” তদুত্তরে সাহাবায়ে কেরাম عَلَیۡہِمُ الرِّضۡوَان আরয করলেন: “আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর রাসূল صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ই এ বিষয়ে ভাল জানেন।” প্রিয় মুস্তফা صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যখন মানুষ অযু করে তখন হাত ধোয়ার সময় হাতের গুনাহ্, মুখমন্ডল ধোয়ার সময় মুখমন্ডলের গুনাহ্, মাথা মাসেহ্ করার সময় মাথার গুনাহ্, আর পা ধোয়ার সময় পায়ের গুনাহ সমূহ্ ঝরে যায়।” (মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, খন্ড ১ম, পৃষ্ঠা ১৩০, হাদীস নং-৪১৫)

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! সাহাবায়ে কিরাম عَلَیۡہِمُ الرِّضۡوَان নবী করীম صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর প্রতিটি অভ্যাস ও সুন্নাতকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতেন। পাশাপাশি উপরোক্ত বর্ণনা থেকে গুনাহ্ ঝরে যাওয়ার ব্যবস্থাপত্রটাও জানা গেলো। اَلْحَمْدُ لِلّٰہِ عَزَّوَجَلَّ অযুর মধ্যে কুলি করার দ্বারা মুখের গুনাহ, নাকে পানি দিয়ে নাক সাফ করার দ্বারা নাকের গুনাহ্, মুখমন্ডল ধোয়ার দ্বারা চোখের পলক সহ পুরো চেহারার গুনাহ্, হাত ধোয়ার দ্বারা হাতের গুনাহের সাথে সাথে নখের নিচের গুনাহ্, মাথা ও কান মাসেহ্ করার দ্বারা মাথার গুনাহের সাথে সাথে কানের গুনাহ্ আর পা ধোয়ার কারণে পায়ের গুনাহের সাথে সাথে নখের নিচের গুনাহ্ সমূহ্ও ঝরে যায়।

গুনাহ্ ঝরে যাওয়ার ঘটনা

اَلْحَمْدُ لِلّٰہِ عَزَّوَجَلَّ অযুকারীর গুনাহ্ ঝরে যায়, এই প্রসঙ্গে এক ঈমান তাজাকারী ঘটনা বর্ণনা করে হযরত আল্লামা আব্দুল ওয়াহ্হাব শা’রানী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ বলেন: একদা সায়্যিদুনা ইমামে আযম আবূ হানীফা رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ কুফার জামে মসজিদের অযুখানায় আসলেন, তখন তিনি এক যুবককে অযু করতে দেখলেন। তিনি তার অযুর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরতে দেখে বললেন: হে বৎস! তুমি পিতা-মাতার নাফরমানী থেকে তাওবা করো। তৎক্ষণাৎ যুবকটি বললো: আমি তাওবা করলাম। অপর ব্যক্তিকে দেখলেন, তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে অযুর ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরছে। তিনি رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ তাকে বললেন: হে আমার ভাই! তুমি যেনার (ব্যভিচারের) গুনাহ্ থেকে তাওবা করো। লোকটি বললো: “আমি তাওবা করলাম”। অন্য একজন লোকের অযুর পানি ঝরতে দেখে তিনি তাকে বললেন: “মদপান ও গান-বাজনা শুনা থেকে তাওবা করো।” লোকটি বললো: “আমি তাওবা করলাম।”

সায়্যিদুনা ইমামে আযম আবূ হানীফা রَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ এর কাশ্ফের কারণে মানুষের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ হয়ে যেতো। এইজন্য তিনি আল্লাহ্ তাআলার দরবারে তাঁর কাশফ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার জন্য দোয়া করলেন। আল্লাহ্ তাআলা দোয়া কবুল করলেন। এরপর থেকে অযুকারীর গুনাহ্ ঝরে যাওয়ার দৃশ্য তাঁর চোখে পড়া বন্ধ হয়ে গেলো। (আল মীযানুল কুবরা, ১ম খন্ড, ১৩০ পৃষ্ঠা)

অযুর ফযীলত ও গুরুত্ব

অযুতে সাওয়াব পাওয়ার জন্য নিয়্যত জরুরি
যেমনিভাবে দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ১২৫০ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “বাহারে শরীয়াত” (সংশোধিত) এর ১ম খন্ডের ২৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে:

👉 অযুতে সাওয়াব পাওয়ার জন্য আল্লাহ্ তাআলার হুকুম পালনের নিয়্যতে অযু করাটা জরুরি। অন্যথায় অযু হয়ে যাবে, তবে সাওয়াব পাওয়া যাবে না।

👉 আ’লা হযরত رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ বলেন: অযুর মধ্যে নিয়্যত না করার অভ্যাস যার আছে, সে গুনাহগার হবে। নিয়্যত করাটা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
📖 (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংকলিত), ৪র্থ খন্ড, ৬১৬ পৃষ্ঠা)

সম্পূর্ণ শরীর পবিত্র হয়ে গেলো!

🔹 দুইটি হাদীসের সারাংশ:
“যে ব্যক্তি بِسْمِ الله পাঠ করে অযু করলো, তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত সম্পূর্ণ শরীর পবিত্র হয়ে গেলো।”

📖 (সুনানে দারু কুতনী, ১ম খন্ড, ১০৮-১০৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২২৮-২২৯)

🔹 যে ব্যক্তি بِسْمِ الله না পড়ে অযু করলো, তার ততটুকু শরীরই পাক হবে, যতটুকুর উপর পানি প্রবাহিত হয়েছে।

অযুর বরকতে ফেরেশতারা নেকী লিখতে থাকেন

🔹 হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ থেকে বর্ণিত:

রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসূলে আকরাম صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন:

🟢 “হে আবু হুরায়রা! যখন তুমি অযু করো, তখন بِسْمِ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰه বলো। যতক্ষণ তোমার অযু থাকবে, ততক্ষণ তোমার ফেরেশতা (কিরামান কাতেবীন) তোমার জন্য নেকী লিখতে থাকবে।”

📖 (আল মু’জামুস সগীর লিত তাবারানী, ১ম খন্ড, ৭৩ পৃষ্ঠা, হাদীস-১৮৬)

অযু অবস্থায় শোয়ার ফযীলত

🔹 হাদীসে পাকে বর্ণিত রয়েছে:

“অযু অবস্থায় শোয়া ব্যক্তি একজন রোযাদার ইবাদাতকারীর মত।”

📖 (কানুযুল উম্মাল, ৯ম খন্ড, ১২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৫৯৯৪)

অযু অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী শহীদের মর্যাদা লাভ করে
🔹 সুলতানে মদীনা, হুযুর صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم হযরত আনাস رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ কে ইরশাদ করেন:

🟢 “বৎস! সম্ভব হলে সবসময় অযু অবস্থায় থাকো। কেননা, ‘মালাকুল মওত’ যদি কারো রূহ অযু অবস্থায় কবজ করেন, তবে তার শাহাদাতের মর্যাদা নসীব হবে।”

📖 (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ২৯ পৃষ্ঠা, হাদীস-২৭৮৩)

👉 আমার আক্বা, আ’লা হযরত, ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ বলেন: “সব সময় অযু অবস্থায় থাকা মুস্তাহাব।”

বিপদ থেকে সুরক্ষিত থাকার ব্যবস্থা
🔹 আল্লাহ্ তাআ’লা হযরত সায়্যিদুনা মুসা কালীমুল্লাহ عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام কে ইরশাদ করেন:

🟢 “হে মুসা! অযুবিহীন অবস্থায় যদি তোমার নিকট কোন মুসীবত আসে, তাহলে এর জন্য তুমি নিজেই দায়ী।”

📖 (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ২৯ পৃষ্ঠা, হাদীস-২৭৮২)

👉 ফতোওয়ায়ে রযবীয়ায় বর্ণিত রয়েছে:
“সব সময় অযু অবস্থায় থাকা ইসলামের (একটি উত্তম) সুন্নাত।”

📖 (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংকলিত), ১ম খন্ড, ৭০২ পৃষ্ঠা)

সব সময় অযু থাকার সাতটি ফযীলত

🔹 আমার আক্বা, আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ বলেন:

🔹 কিছু আরেফিন رَحِمَہُمُ اللہُ تَعَالٰی বলেছেন: যে ব্যক্তি সব সময় অযু অবস্থায় থাকে, আল্লাহ্ তাআলা তাঁকে সাতটি মর্যাদা দান করেন:

1️⃣ ফেরেশতাগণ তার সঙ্গ লাভের ইচ্ছা পোষণ করেন।
2️⃣ কলম তার জন্য নেকী লিখতে থাকে।
3️⃣ তার অঙ্গগুলো তাসবীহ পাঠ করে।
4️⃣ তাকবীরে উলা (প্রথম তাকবীর) হাতছাড়া হয় না।
5️⃣ নিদ্রাকালে আল্লাহ্ তাআলা কিছু ফেরেশতা প্রেরণ করেন, যারা তাকে মানুষ ও জ্বীনের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করেন।
6️⃣ মৃত্যুর যন্ত্রণা তার জন্য সহজ হয়ে যায়।
7️⃣ যতক্ষণ অযু সহকারে থাকবে, সে আল্লাহ্ তাআলার নিরাপত্তায় থাকবে।

📖 (প্রাগুক্ত, ৭০২-৭০৩ পৃষ্ঠা)

দ্বিগুণ সাওয়াব লাভ

🔹 শীত, দুর্বলতা, সর্দি, কাশি, জ্বর ও অসুস্থ অবস্থায় অযু করা কঠিন হলেও,

🟢 “যারা এ অবস্থায়ও অযু করবে, তারা দ্বিগুণ সাওয়াব পাবে।”

📖 (আল মুজামুল আওসাত লিত তাবারানী, ৪র্থ খন্ড, ১০৬ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৫৩৬৬)

শীতের মধ্যে অযুর ঘটনা

🔹 হযরত সায়্যিদুনা ওসমান গণি رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ তাঁর গোলাম হুমরান কে বললেন:

🟢 “যে বান্দা পরিপূর্ণ অযু করে, আল্লাহ্ তাআলা তার আগের ও পরের গুনাহ ক্ষমা করে দেন।”

📖 (মুসনাদে বয্যার, ২য় খন্ড, ৭৫ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪২২। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ২৮৫ পৃষ্ঠা)

এভাবেই অযুর ফযীলত ও বরকত আমাদের জীবনে অসংখ্য উপকার বয়ে আনে। আল্লাহ্ তাআলা আমাদের অযুর প্রতি যত্নশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।

অযুর পদ্ধতি (হানাফী)

অযুর সময় কা’বা শরীফের দিকে মুখ করে উঁচু জায়গায় বসা মুস্তাহাব। অযুর জন্য নিয়্যত করা সুন্নাত। যদিও নিয়্যত না করলেও অযু হয়ে যাবে, তবে সাওয়াব পাওয়া যাবে না। অন্তরের ইচ্ছাকে “নিয়্যত” বলে, এবং মুখে উচ্চারণ করাও উত্তম। মুখে এভাবে নিয়্যত করুন:

“আমি আল্লাহ্ তাআলার নির্দেশ পালনার্থে পবিত্রতা অর্জনের জন্য অযু করছি।”

এরপর بِسْمِ الله পড়া সুন্নাত। বরং بِسْمِ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰه বলা আরও উত্তম। এর ফলে যতক্ষণ অযুর অবস্থায় থাকবেন, ততক্ষণ ফিরিস্তাগণ আপনার জন্য নেকী লিখতে থাকবেন।

📖 (আল মু’জামুস সগীর লিত তাবারানী, ১ম খন্ড, ৭৩ পৃষ্ঠা, হাদীস-১৮৬)

অযুর ধাপসমূহ

✅ হাত ধোয়া: উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করুন এবং আঙ্গুলগুলো খিলাল করুন। (পানির অপচয় রোধে নল বন্ধ রাখুন)।

✅ মিসওয়াক করা: ডান ও বাম, উপর ও নিচের দাঁত মিসওয়াক করুন এবং প্রতিবার ধুয়ে নিন।

📖 হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মদ গাযালী রَحۡمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیهِ বলেন:
“মিসওয়াক করার সময় নামাযে ক্বিরাত পাঠ ও আল্লাহর যিকিরের জন্য মুখ পবিত্র করার নিয়্যত করা উচিত।”

📖 (ইহ্ইয়াউল উলুম, ১ম খন্ড, ১৮২ পৃষ্ঠা)

✅ কুলি করা: ডান হাতে তিন অঞ্জলী পানি নিয়ে মুখে তিনবার কুলি করুন। রোজাদার না হলে গড়গড়া করুন।

✅ নাকে পানি দেওয়া: ডান হাত দিয়ে তিনবার পানি নিয়ে নাকে প্রবেশ করান এবং বাম হাত দিয়ে পরিষ্কার করুন। রোজাদার না হলে নাকের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছান।

✅ মুখ ধোয়া: কপালের চুল গজানোর স্থান থেকে চিবুক এবং এক কানের লতি থেকে অন্য কানের লতি পর্যন্ত পুরো মুখ তিনবার ধৌত করুন। দাঁড়ি থাকলে খিলাল করুন।

✅ হাত ধোয়া: আঙ্গুলের মাথা থেকে কনুই পর্যন্ত তিনবার ডান হাত, তারপর বাম হাত ধৌত করুন।

⚠️ অনেকে হাতের কোষ থেকে পানি ছেড়ে দেন, যা কনুই ও বাহুর চারপাশে পানি না পৌঁছানোর আশঙ্কা তৈরি করে। বরং শরিয়তসম্মত নিয়মে হাত ধৌত করুন, যাতে পানির অপচয় না হয়।

✅ মাথার মাসেহ:

১. দুই বৃদ্ধাঙ্গুলি ও শাহাদাত আঙ্গুল বাদ দিয়ে বাকি তিন আঙ্গুল কপালের চুল বা চামড়ার উপর রেখে মাথার পিছনের দিকে টেনে নিয়ে যান।

  1. এরপর হাতের তালু পিছন থেকে কপাল পর্যন্ত ফিরিয়ে আনুন।
  2. শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে কানের ভিতরের অংশ, বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে বাইরের অংশ মাসেহ করুন।
  3. কনিষ্ঠাঙ্গুল দিয়ে কানের ছিদ্র মাসেহ করুন ও আঙ্গুলের পিঠ দিয়ে ঘাড়ের পিছনের অংশ মাসেহ করুন।

⚠️ গলা ধৌত করা, কনুই ও কব্জি মাসেহ করা সুন্নাত নয়।

✅ পা ধোয়া:

প্রথমে ডান পা, তারপর বাম পা আঙ্গুল থেকে গোড়ালি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করুন।

মুস্তাহাব হলো, অর্ধ গোছা পর্যন্ত ধৌত করা।

আঙ্গুল খিলাল করা সুন্নাত; বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুল দিয়ে প্রথমে ডান পা, তারপর বাম পায়ের আঙ্গুল খিলাল করুন।

📖 হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মদ গাযালী রَحۡمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیهِ বলেন:
“অযুর প্রতিটি অঙ্গ ধৌত করার সময় এ আশাই করা উচিত যে, আমার এই অঙ্গের গুনাহ্ ঝরে যাচ্ছে।”

📖 (ইহ্ইয়াউল উলুম, ১ম খন্ড, ১৮৩ পৃষ্ঠা)

উপসংহার

অযুর প্রতিটি ধাপে পানির অপচয় রোধ করুন এবং পানির নল খোলা রাখার অভ্যাস পরিবর্তন করুন। অযুর সময় মনোযোগ ও খুশু-খুযু রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে গুনাহ্ থেকে পবিত্রতা অর্জনের অনুভূতি জাগ্রত হয়।

আল্লাহ্ আমাদের সহিহভাবে আমল করার তাওফিক দিন—আমিন!

Related posts

Leave a Comment