অজুর গুরুত্ব: ফরজ, সুন্নত ও দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত – অজুর ফরজ, সুন্নত ও দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত
অজু সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিসের দৃষ্টিতে
দরূদ শরীফের ফযীলত
সুলতানে দো-আলম, নূরে মুজাস্সাম, শাহে বনী আদম, রাসূলে মুহ্তাশাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি দিনে ও রাতে আমার প্রতি ভালবাসা ও ভক্তি সহকারে তিনবার করে দরূদ শরীফ পাঠ করবে, আল্লাহ্ তাআলার উপর (নিজ বদান্যতায়) দায়িত্ব যে, তিনি তার ঐ দিন ও ঐ রাতের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। (আল মুজামুল কবীর লিত তিবরানী, ১৮তম খন্ড, ৩৬২ পৃষ্ঠা, হাদীস-৯২৮)
হযরত ওসমান গণি رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ এর নবী-প্রেম
একদা হযরত সায়্যিদুনা ওসমান গণি رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ এক জায়গায় পৌঁছে অযুর জন্য পানি চাইলেন এবং অযু করলেন আর আপনা আপনিই মুচকি হাসলেন। তারপর সঙ্গীদেরকে বললেন: “আপনারা কি জানেন! আমি কেন মুচকি হাসলাম?” অতঃপর তিনি নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বললেন:
একদা হুযুর পুরনূর صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এই জায়গায় অযু করেছিলেন এবং অযু শেষ করে তিনি মুচকি হেসেছিলেন এবং সাহাবায়ে কিরামদের عَلَیۡہِمُ الرِّضۡوَان উদ্দেশ্যে ইরশাদ করেন: “তোমরা কি জান, আমি কেন হেসেছি?” তদুত্তরে সাহাবায়ে কেরাম عَلَیۡہِمُ الرِّضۡوَان আরয করলেন: “আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর রাসূল صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ই এ বিষয়ে ভাল জানেন।” প্রিয় মুস্তফা صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যখন মানুষ অযু করে তখন হাত ধোয়ার সময় হাতের গুনাহ্, মুখমন্ডল ধোয়ার সময় মুখমন্ডলের গুনাহ্, মাথা মাসেহ্ করার সময় মাথার গুনাহ্, আর পা ধোয়ার সময় পায়ের গুনাহ সমূহ্ ঝরে যায়। (মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, খন্ড ১ম, পৃষ্ঠা ১৩০, হাদীস নং-৪১৫)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! সাহাবায়ে কিরাম عَلَیۡہِمُ الرِّضۡوَان নবী করীম صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর প্রতিটি অভ্যাস ও সুন্নাতকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতেন। পাশাপাশি উপরোক্ত বর্ণনা থেকে গুনাহ্ ঝরে যাওয়ার ব্যবস্থাপত্রটাও জানা গেলো। اَلْحَمْدُ لِلّٰہِ عَزَّوَجَلَّ অযুর মধ্যে কুলি করার দ্বারা মুখের গুনাহ, নাকে পানি দিয়ে নাক সাফ করার দ্বারা নাকের গুনাহ্, মুখমন্ডল ধোয়ার দ্বারা চোখের পলক সহ পুরো চেহারার গুনাহ্, হাত ধোয়ার দ্বারা হাতের গুনাহের সাথে সাথে নখের নিচের গুনাহ্, মাথা ও কান মাসেহ্ করার দ্বারা মাথার গুনাহের সাথে সাথে কানের গুনাহ্ আর পা ধোয়ার কারণে পায়ের গুনাহের সাথে সাথে নখের নিচের গুনাহ্ সমূহ্ও ঝরে যায়।
গুনাহ্ ঝরে যাওয়ার ঘটনা
اَلْحَمْدُ لِلّٰہِ عَزَّوَجَلَّ অযুকারীর গুনাহ্ ঝরে যায়, এই প্রসঙ্গে এক ঈমান তাজাকারী ঘটনা বর্ণনা করে হযরত আল্লামা আব্দুল ওয়াহ্হাব শা’রানী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ বলেন: একদা সায়্যিদুনা ইমামে আযম আবূ হানীফা رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ কুফার জামে মসজিদের অযুখানায় আসলেন, তখন তিনি এক যুবককে অযু করতে দেখলেন। তিনি তার অযুর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরতে দেখে বললেন: হে বৎস! তুমি পিতা-মাতার নাফরমানী থেকে তাওবা করো। তৎক্ষণাৎ যুবকটি বললো: আমি তাওবা করলাম।
অপর ব্যক্তিকে দেখলেন, তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে অযুর ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরছে। তিনি رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ তাকে বললেন: হে আমার ভাই! তুমি যেনার (ব্যভিচারের) গুনাহ্ থেকে তাওবা করো। লোকটি বললো: “আমি তাওবা করলাম”। অন্য একজন লোকের অযুর পানি ঝরতে দেখে তিনি তাকে বললেন: “মদপান ও গান-বাজনা শুনা থেকে তাওবা করো।” লোকটি বললো: “আমি তাওবা করলাম।” সায়্যিদুনা ইমামে আযম আবূ হানীফা رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ এর কাশ্ফের কারণে মানুষের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ হয়ে যেতো। এইজন্য তিনি আল্লাহ্ তাআলার দরবারে তাঁর কাশফ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার জন্য দোয়া করলেন। আল্লাহ্ তাআলা দোয়া কবুল করলেন। এরপর থেকে অযুকারীর গুনাহ্ ঝরে যাওয়ার দৃশ্য তাঁর চোখে পড়া বন্ধ হয়ে গেলো। (আল মীযানুল কুবরা, ১ম খন্ড, ১৩০ পৃষ্ঠা)
উত্তম চরিত্র নিয়ে ইসলামিক উক্তি এবং হাদিস
অজুর ফরজ কয়টি এবং কি কি
অজু করার কিছু ফরজ (অবশ্যই করতে হবে) বিষয় রয়েছে, যেগুলো পূর্ণাঙ্গ অজু করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অজুর মোট ফরজ হলো ৪টি । ফরজ ছাড়া অজু অসম্পূর্ণ হবে এবং এর মাধ্যমে কোন ইবাদতও গ্রহণযোগ্য হবে না।
নিচে অজুর ফরজের বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল:
১. সম্পূর্ণ মুখমন্ডল ধোয়া
২. হাত ধোয়া (কুনইসহ হাত ধোয়া)
৩. পায়ের গোড়ালিসহ ধোয়া
৪. মাথা মাসেহ করা (৪ ভাগের এক ভাগ)
অজুর সুন্নত সমূহ কি কি
অজু করার সময় কিছু সুন্নত (যেগুলি পালন করলে পুরস্কৃত হওয়া যায়, তবে না করলে দোষ কিছু হয় না) বিষয় রয়েছে, যা আদায় করলে অজুর মর্যাদা বাড়ে এবং ইবাদতের জন্য পূর্ণতা আসে। এগুলি পালনের মাধ্যমে অজু আরও বেশি সঠিকভাবে এবং পূর্ণাঙ্গভাবে করা হয়।
এখানে কিছু সুন্নত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো:
- মিসওয়াক করা
- নির্দিষ্টভাবে পানি ব্যবহার করা
- অজুর জন্য সময় নেওয়া
- ডান পাশ দিয়ে অজু শুরু করা
- দু’চোখের পাতায় পানি লাগানো
অজু করার দোয়া
অজু করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া রয়েছে, যা পাঠ করলে অজু করতে আরও সুফল পাওয়া যায়। এ দোয়াগুলির মাধ্যমে আপনি আল্লাহর কাছ থেকে আরো বেশি বরকত এবং দয়া লাভ করতে পারেন।
নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া নিয়ে আলোচনা করা হল।
১. অজু শুরু করার দোয়া
অজু শুরু করার আগে, “বিসমিল্লাহ” বলার মাধ্যমে অজু শুরু করা উচিত। এটি সঠিকভাবে অজু করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া।
২. অজুর পর দোয়া
অজু শেষ করার পর, “আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদু হুয়া রসূলুহ” পড়া একটি সুন্দর দোয়া। এটি মুখে বললে আল্লাহর কাছে আরও বেশি ক্ষমা প্রাপ্তি ও রহমত পাওয়া যায়।
৩. অজুর পর অন্য দোয়া
অজু শেষে একটি বিশেষ দোয়া রয়েছে যা হলো, “আল্লাহুম্মা জালনী মিন আত্-তাওয়াবীন ওয়াল-মুততাহহিরীন”। এর মাধ্যমে আপনি আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কৃত হওয়ার আশা রাখতে পারেন।
অজুর মাধ্যমে শরীরের নাপাকিরা দূর হয়ে যায় এবং মনও পরিশুদ্ধ হয়। অজু করার পর আপনি তাজা অনুভব করবেন এবং আপনার মনোযোগ আরও বেশি কেন্দ্রীভূত হবে।
অজুর সময় যে কয়েকটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত
- অজু করার আগে মিসওয়াক ব্যবহার করুন
- পানি অপচয় করবেন না
- সঠিকভাবে ডান ও বাম হাত ধুয়ে অজু করুন
- অজু শেষে দোয়া পাঠ করুন
অজু করার দোয়া নিয়ত
নিয়ত: “নাওয়াইতু আন আতাওয়াদ্দা’ লিল্লাহি তাআলা।”
অর্থ: আমি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য অজু করার নিয়ত করছি।
অজু শুরুর দোয়া: بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
উচ্চারণ: “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।”
অর্থ: দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহর নামে (শুরু করছি)।
অজু শেষ করার দোয়া: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
উচ্চারণ: “আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসূলুহু।”
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসূল।
এই দোয়াগুলো মনে রেখে অজু করলে ইবাদতের সওয়াব আরও বৃদ্ধি পাবে।
অজু সম্পর্কে আরো পড়ুন :
- অজুর নিয়ম ও ফরজ কয়টি? জানুন সহজভাবে
- অজু করার দোয়া, নিয়ত ও হাদিস থেকে শিক্ষা
- অজু ভঙ্গের কারণ ৭টি এবং প্রতিকার
- অজু করার সঠিক পদ্ধতি: ছবি ও নির্দেশনাসহ
- অজু কাকে বলে এবং এর ফজিলত কী?
- অজুর শুরু ও শেষে দোয়া বাংলায়
- অজু করে ঘুমানোর ফজিলত ও তাৎপর্য
- অজু সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিসের দৃষ্টিতে
- অজু ছাড়া কি সুরা পড়া যাবে? ইসলামি দৃষ্টিকোণ