আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ২১ মে ২০২৫
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তানে পৃথক নিরাপত্তা অভিযানে ‘ভারতের মদদপুষ্ট’ নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠনের ১২ সদস্য নিহত হয়েছে। এসব অভিযানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দুই সদস্যও শহিদ হয়েছেন। সোমবার এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

টিটিপি ও বিএলএফের বিরুদ্ধে অভিযান
আইএসপিআর জানায়, শনিবার ও রোববার খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তানে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। খাইবার পাখতুনখোয়ায় নিষিদ্ধঘোষিত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবং বেলুচিস্তানে বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্টের (বিএলএফ) বিরুদ্ধে এ অভিযান চালানো হয়।
খাইবার পাখতুনখোয়া: চার জেলায় অভিযানে ৯ সন্ত্রাসী নিহত
লাক্কি মারওয়াত জেলায় অভিযানে পাঁচ সন্ত্রাসী নিহত হন। বন্নু জেলায় দুই সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়। এছাড়া, উত্তর ওয়াজিরিস্তানের মির আলি এলাকায় সেনা কনভয়ের ওপর হামলার জবাবে আরও দুই সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়। এই হামলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্পোরাল ফারহাদ আলী তুরি (২৯) ও ল্যান্স নায়েক সাবির আফ্রিদি (৩২) শহিদ হন।
আইএসপিআর জানিয়েছে, সন্ত্রাসীদের নিশ্চিহ্ন করতে এসব অঞ্চলে চিরুনি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বেলুচিস্তানে অভিযান: সন্ত্রাসী নেতা সহ নিহত ৩
বেলুচিস্তানের আওয়ারান জেলার গিশকুর এলাকায় এক অভিযানে সন্ত্রাসী ইউনুস নিহত হন এবং আরও দুইজন আহত হন। একইসঙ্গে তুরবাত শহরে আরেক অভিযানে সন্ত্রাসী রিং লিডার সাবর উল্লাহ ও তার সহযোগী আমজাদ ওরফে বিচ্চুকে হত্যা করে নিরাপত্তা বাহিনী।
আইএসপিআর দাবি করেছে, নিহতরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা, ভারতের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি সফল অভিযানের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, “সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই পুরোপুরি সফল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, “বেলুচিস্তানে নিরীহ নাগরিকদের বিরুদ্ধে চালানো সন্ত্রাস ভারতের ষড়যন্ত্রেরই অংশ। আমরা দেশের শান্তি বিনষ্টে ভারতের সব অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দেব।”
ভারতের বিরুদ্ধে আগের অভিযোগ ও আন্তর্জাতিক চিত্র
এর আগে চলতি মাসে বেলুচিস্তানের কাচ্চি জেলায় বিএলএ-এর পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে পাকিস্তানের সাত সেনা শহিদ হন। গত মাসে আইএসপিআর মহাপরিচালক লে. জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে হামলায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছিলেন।
সন্ত্রাসবাদের পরিসংখ্যান
তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) ২০২২ সালের নভেম্বরে যুদ্ধবিরতি শেষ করার পর দেশজুড়ে সন্ত্রাসী হামলা বেড়ে গেছে। পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ জানায়, ২০২৫ সালের মার্চে দেশজুড়ে ১০০টিরও বেশি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে—যা ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ।
গ্লোবাল টেরোরিজম ইনডেক্স ২০২৫ অনুযায়ী, সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। গত এক বছরে সন্ত্রাসী হামলায় মৃতের সংখ্যা ৪৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,০৮১ জনে।