সাহু সিজদা কখন দিতে হয় | সাহু সিজদা দেওয়ার নিয়ম

0
163
সাহু সিজদা কখন দিতে হয় | সাহু সিজদা দেওয়ার নিয়ম
সাহু সিজদা কখন দিতে হয় | সাহু সিজদা দেওয়ার নিয়ম
Advertisements
5/5 - (2 votes)

সাহু সিজদা কখন দিতে হয় | সাহু সিজদা দেওয়ার নিয়ম

সিজদা সাহু (আরবী: السجدة السهو; আস-সাজদাতুস সাহ্ও) দিতে হয় যখন কয়েকটি বিশেষ কারণে নামায ত্রুটিযুক্ত হয়ে পড়ে। ত্রুটিযুক্ত হয়ে পড়লে ছালাতের শেষ বৈঠকে ডান পাশে সালাম ফেরানোর পর বাম পাশে সালাম না ফিরিয়ে দুইবার সিজদা করে তারপর আবার আত-তাহিয়াত এবং ছালাওয়াত পড়ে ডানে-বামে সালাম ফিরিয়ে ছালাত শেষ করতে হয়। (Wikipedia)

মুসলিম হিসেবে আমাদের ইসলামী জ্ঞান অর্জন করা ফরজ ছিল, অর্থাৎ ইসলামে যেসব বিষয়াদি আমাদের জন্য ফরজ তার জ্ঞান অর্জন করা্ও আমাদের জন্য ফরজ । কিন্তু আমরা এখন এইসব বিষয় নিয়ে ভাবি না । আজকের পোস্টে আপনারা পাচ্ছেন সিজদায়ে সাহু সম্পর্কে সিজদায়ে সাহু নিয়ে আমরা অনেকেই দ্বিধায় ভুগি। কখন সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে, কখন হবে না- এমন প্রশ্ন ঘুরঘুর করে মনের ভেতর। সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হওয়ার কারণগুলো মনে রাখলেই দ্বিধা দূর হবে ইনশাআল্লাহ।

সাহু সিজদা কখন দিতে হয় বা সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হওয়ার মৌলিক কারণ –

১. নামাজের কোনো ওয়াজিব ভুলে ছেড়ে দিলে।
২. কোনো ওয়াজিব তিন তাসবীহ পরিমাণ বিলম্ব করে আদায় করলে।
৩. কোনো রুকন তিন তাসবীহ পরিমাণ বিলম্ব করে আদায় করলে।
৪. কোনো রুকন আগপিছ করে আদায় করলে।
৫. কোনো রুকন নিয়মের অতিরিক্ত আদায় করলে।
৬. কোনো ওয়াজিব ভুলে নিয়মের অতিরিক্ত আদায় করলে।
৭. কোনো ওয়াজিব যেভাবে আদায় করার কথা সেভাবে আদায় না করে অন্যভাবে আদায় করলে। (যেমন উঁচুস্বরে কেরাতবিশিষ্ট নামাজে নিচুস্বরে কেরাত পড়লে)
মোটকথা, নামাজের ওয়াজিব আদায়ে কোনো সমস্যা হলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।

Advertisements
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনু বুহায়নাহ্ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক সালাতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’রাক‘আত আদায় করে না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। মুসল্লীগণ তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন। 
যখন তাঁর সালাত সমাপ্ত করার সময় হলো এবং আমরা তাঁর সালাম ফিরানোর অপেক্ষা করছিলাম, তখন তিনি সালাম ফিরানোর পূর্বে তাকবীর বলে বসে বসেই দু’টি সিজদা্ করলেন। অতঃপর সালাম ফিরালেন।
(৮২৯; মুসলিম ৫/১৯, হাঃ ৫৭০, আহমাদ ২২৯৮১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৫১)

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এ-সংক্রান্ত হাদীস রয়েছে,

صَلَّى لَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عليهِ وسلَّمَ رَكْعَتَيْنِ مِن بَعْضِ الصَّلَوَاتِ، ثُمَّ قَامَ فَلَمْ يَجْلِسُ، فَقَامَ النَّاسُ معه، فَلَمَّا قَضَى صَلَاتَهُ، ونَظَرْنَا تَسْلِيمَهُ كَبَّرَ، فَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ
وهو جَالِسٌ قَبْلَ التَّسْلِيمِ، ثُمَّ سَلَّمَ.

আবদুল্লাহ ইবনু বুহায়না রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক নামাজ আমাদের দুই রাকাত পড়ান। তারপর না বসে দাঁড়িয়ে যান। মুক্তাদীরাও তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে যায়। যখন তিনি নামাজ পূর্ণ করলেন এবং আমরা তাঁর সালাম ফেরানোর অপেক্ষা করছিলাম তখন সালাম ফেরানোর আগে তাকবীর দিলেন এবং বসা অবস্থায় দুটি সিজদা করলেন। তারপর সালাম ফেরালেন।’

صلى النبي صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ: الظُّهْرَ خَمْسًا، فَقالوا: أزيد في الصَّلَاةِ؟ قال: وما ذَاكَ قالوا: صَلَّيْتَ خَمْسًا،
فَتَنَى رِجْلَيْهِ وَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ.
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহর পাঁচ রাকাত পড়েন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো, নামাজ কি বাড়ানো হয়েছে? তিনি বললেন, কী হয়েছে? প্রশ্নকারী বলল, আপনি পাঁচ রাকাত পড়েছেন। অতঃপর তিনি সালাম ফেরানোর পর দুটি সিজদা করেন।

অন্য হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
ص الله صلى النبي ﷺ إحدى صلاتي العَشِيِّ – قَالَ مُحَمَّدٌ: وَأَكْثَرُ ظَنِّي العَصْرَ – ركْعَتَيْنِ، ثُمَّ سَلَّمَ، ثُمَّ قَامَ إِلى خَشَبَةٍ فِي مُقَدَّمِ المَسْجِدِ، فَوَضَعَ يَدَهُ عَلَيْهَا، وفيهم أَبُو بَكْرٍ، وَعُمَرُ رَضِيَ اللهُ عنهما، فهابا أن يُكَلِّمَاهُ، وَخَرَجَ سَرَعَانُ النَّاسِ فَقالوا : أَقَصُرَتِ الصَّلاةُ؟ ورَجُلٌ يَدْعُوهُ النبي ﷺ ذُو اليَدَيْنِ، فَقَالَ: أنَسِيتَ أَمْ قَصْرَتْ فَقالَ : لَمْ أنسَ ولَمْ تُقْصَر، قالَ: بَلَى قَدْ نَسِيتَ، فَصَلَّى رَكَعَتَيْنِ، ثُمَّ سَلَّمَ، ثُمَّ كَبْرَ، فَسَجَدَ مِثْلَ سُجُودِهِ أَوْ أَظْوَلَ، ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ، فَكَبَّرَ، ثُمَّ وَضْعَ رَأْسَهُ، فَكَبْرَ، فَسَجَدَ مِثْلَ سُجُودِهِ أَوْ أَظْوَلَ، ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ.وكبر

আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিকালের দুই নামাজের এক নামাজ (বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন বলেন, আমার প্রবল ধারণা আসরের নামাজ) দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেন। তারপর মসজিদের সম্মুখে একটি কাষ্ঠখণ্ডের কাছে গিয়ে এর ওপর হাত রাখেন। মুসল্লীদের মধ্যে আবু বকর ও উমর রাযি.-ও ছিলেন। কিন্তু তারা তাঁর সাথে কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। আর ত্বরাকারীরা বেরিয়ে বলতে লাগল, নামাজ কি কমিয়ে দেয়া হয়েছে?

এক ব্যক্তি, যাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল ইয়াদাইন বলে ডাকতেন, জিজ্ঞাসা করল, আপনি কি ভুলে গেছেন না নামাজ কমিয়ে দেয়া হয়েছে? তিনি বললেন, আমি ভুলিনি আবার নামাজ কমিয়ে দেয়াও হয়নি! লোকটি বলল, আপনি অবশ্যই ভুলে গেছেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, যুল ইয়াদাইন যা বলছে তা কি ঠিক? তখন সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি সামনে অগ্রসর হলেন এবং ছুটে যাওয়া রাকাত পড়ে সালাম ফেরালেন। তারপর তাকবীর দিয়ে অনুরূপ বা তার চেয়ে দীর্ঘ সিজদা করলেন। তারপর মাথা তুলে তাকবীর দিলেন। তারপর মাথা নিচু করে তাকবীর দিলেন। তারপর অনুরূপ বা তার চেয়ে দীর্ঘ সিজদা করলেন। তারপর মাথা তুলে তাকবীর দিলেন।

সিজদায়ে সাহু সালামের পরে না আগে – সাহু সিজদা কখন দিতে হয়?

উপরিউক্ত হাদীসগুলো থেকে জানা যায় যে, সিজদায়ে সাহু নামাজের সালাম ফেরানোর পরে ও আগে উভয়ভাবেই করা যাবে। তবে সর্বোত্তম হলো পরে করা। কারণ এ ব্যাপারে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং বড় বড় সাহাবী-তাবেয়ীর আমল বা ফতোয়াও এ অনুযায়ীই ছিল। এ সম্পর্কে কিছু হাদীস ইতিমধ্যে উল্লেখিত হয়েছে। এখানে আরও কিছু আছার উল্লেখ করা হলো :

حدثنا ابن عيينة، عن منصور، عن إبراهيم، عن علقمة أن عبد الله سجد سجدتي السهو بعد السلام، وذكر أنالنبي صلى الله عليه وسلم فعله.
০১. আলকামা থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ (ইবনু মাসউদ) রাযি. সিজদায়ে সাহু সালামের পরে করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছেন।”

০২. আবদুল্লাহ ইবনু হানযালা ইবনু রাহিব থেকে বর্ণিত, উমর ইবনু খাত্তাব রাযি. মাগরিবের নামাজ পড়েন। কিন্তু প্রথম রাকাতে একেবারেই কুরআন পাঠ করেননি। দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সুরা দুইবার পড়েন। যখন সালাম ফেরালেন তখন দুটি সেজদা করলেন। (শরহে মাআনিল আছার,১/৭২৪)
عن بيان أبي بشر الأحمسي، قال: سمعت قيس بن أبي حازم، قال صلى بنا . سعد بن مالك، فقام في الركعتين الأوليين فقالوا: سبحان الله، فقال: سبحان الله فمضى، فلما سلم سجد سجدتي السهو.

০৩. কায়েস ইবনু আবী হাযিম থেকে বর্ণিত, সাদ ইবনু মালেক রাযি. আমাদের নিয়ে নামাজ পড়েন এবং দুই রাকাতে (না বসে) দাঁড়িয়ে যান। মুকতাদীরা ‘সুবহানাল্লাহ’ বললে তিনিও ‘সুবহানাল্লাহ’ বলেন এবং নামাজ অব্যাহত রাখেন। অতঃপর সালাম ফিরিয়ে দুটি সেজদা করেন।

عن يوسف بن ماهك قال صلى بنا ابن الزبير رضي الله عنهما، فقام في الركعتين الأوليين من الظهر، فسبحنا به فقال سبحان الله ولم يلتفت إليهم، فقضى ما عليه، ثم سجد سجدتين بعد ما سلم.
০৪. ইউসুফ ইবনে মাহাক থেকে বর্ণিত, ইবনে যুবাইর রাযি. আমাদের নিয়ে যোহরের নামাজ পড়েন। দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়িয়ে গেলে আমরা সুবহানাল্লাহ বলি। তিনিও সুবহানাল্লাহ বলেন এবং তাদের দিকে ভ্রুক্ষেপ করেননি। অতঃপর নামাজ পূর্ণ করে সালাম ফিরিয়ে দুটি সেজদা করেন। -শরহু মাআনিল আছার, ১/৭২৫
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এ-সংক্রান্ত হাদীস রয়েছে,
صَلَّى لَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عليهِ وسلَّمَ رَكْعَتَيْنِ مِن بَعْضِ الصَّلَوَاتِ، ثُمَّ قَامَ فَلَمْ يَجْلِسُ، فَقَامَ النَّاسُ معه، فَلَمَّا قَضَى صَلَاتَهُ، ونَظَرْنَا تَسْلِيمَهُ كَبَّرَ، فَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ
وهو جَالِسٌ قَبْلَ التَّسْلِيمِ، ثُمَّ سَلَّمَ.

আবদুল্লাহ ইবনু বুহায়না রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক নামাজ আমাদের দুই রাকাত পড়ান। তারপর না বসে দাঁড়িয়ে যান। মুক্তাদীরাও তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে যায়। যখন তিনি নামাজ পূর্ণ করলেন এবং আমরা তাঁর সালাম ফেরানোর অপেক্ষা করছিলাম তখন সালাম ফেরানোর আগে তাকবীর দিলেন এবং বসা অবস্থায় দুটি সিজদা করলেন। তারপর সালাম ফেরালেন।’7

صَلَّى النبي صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ: الظُّهْرَ خَمْسًا، فَقالوا: أزِيدَ في الصَّلَاةِ؟ قال: وما ذَاكَ قالوا: صَلَّيْتَ خَمْسًا،
فَتَنَى رِجْلَيْهِ وَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ.
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহর পাঁচ রাকাত পড়েন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো, নামাজ কি বাড়ানো হয়েছে? তিনি বললেন, কী হয়েছে? প্রশ্নকারী বলল, আপনি পাঁচ রাকাত পড়েছেন। অতঃপর তিনি সালাম ফেরানোর পর দুটি সিজদা করেন। 8

সিজদায়ে সাহুর বিস্তারিত মাসায়েল কেরাতের মধ্যে ভুল

সূরা ফাতিহা পড়তে ভুলে যাওয়া

মাসআলা : আপনি যদি ফরজ বা নফল নামাজের প্রথম দুই রাকাতে বা এর যেকোনো এক রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়তে ভুলে যান, তাহলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। কিন্তু যদি ফরজ নামাজের শেষ দুই রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়তে ভুলে যান, তাহলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না। কারণ, ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতই শুধু কেরাতের জন্য নির্ধারিত। তবে নফল বা সুন্নাত নামাজের শেষ দুই রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়তে ভুলে গেলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে; কারণ সুন্নাত ও নফল নামাজের সব রাকাতেই কেরাত পড়তে হয়।”

সূরা ফাতিহা দুইবার পড়া

মাসআলা : ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে ভুলে যদি সূরা ফাতিহা একসাথে দুইবার পড়া হয় অথবা সূরা ফাতিহার অধিকাংশ আয়াত দুইবার পড়া হয়, তাহলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। তবে একবার সূরা ফাতিহা পড়ে কেরাত পড়ার পর যদি পুনরায় সূরা ফাতিহা পড়া হয় অথবা শেষ দুই রাকাতে সূরা ফাতিহা একসাথে দুইবার পড়া হয়, তাহলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না।

ফরজের শেষ দুই রাকাতে সূরা মেলানো

মাসআলা : অনেকে ভুলে ফরজ নামাজের শেষ দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরাও মিলিয়ে ফেলে, এতে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না। ফাতওয়া হিন্দিয়া, ১/১৮৬, বাহরুর রায়িক, ২/১৬৭, মুহিতুল বুরহানী, ২/৩১০

রুকু-সিজদায় বা বৈঠকে সূরা ফাতিহা পড়া

মাসআলা : মাঝে মাঝে এমন হয়, রুকু বা সিজদায় গিয়ে তাসবীহ পড়ার বদলে কেউ কেউ সূরা ফাতিহা পড়ে ফেলেন। আবার কেউ বৈঠকে বসে তাশাহুদের আগে সূরা ফাতিহা পড়ে ফেলেন, এসব অবস্থায় সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। তবে শেষ বৈঠকে বসে প্রথমে তাশাহুদ পড়ার পর যদি সূরা ফাতিহা পড়া হয়, তাহলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না। কারণ, তাশাহুদের পর দুরুদ শরীফ পড়তে হয়, আর তা পড়া ওয়াজিব না হওয়ার কারণে বিলম্ব হলেও সমস্যা নেই। ফাতওয়া হিন্দিয়া, ১/১৮৬, হিদায়া, ১/১৫৭, বাহরুর রায়িক, ২/১৭২, ইমদাদুল আহকাম

সূরা ফাতিহার আগে অন্য সূরা পড়ে ফেলা

মাসআলা : অনেক সময় নামাজ শুরু করার পর ভুলে সূরা ফাতিহা পড়ার বদলে অন্য সূরা পড়া শুরু করা হয়, এ ক্ষেত্রে ছোট তিন আয়াত পরিমাণ বা তারচেয়ে বেশি পড়ার পর যদি সূরা ফাতিহা পড়া হয়, তাহলে সিজদায়ে সাহু আবশ্যক হবে।

ভাবনার বিপরীত সূরা পড়া

মাসআলা : ধরুন আপনি নামাজের আগে ভাবলেন আজকে প্রথম রাকাতে সূরা ফীল পড়বেন, কিন্তু পড়ে ফেললেন সূরা কুরাইশ। এতে আপনার ওপর সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না। ফাতওয়া হিন্দিয়া, ১/১৮৮, বাদায়িউস সানায়ে, ১/৪০৬

ফরজ নামাজে সূরা মেলাতে ভুলে যাওয়া

মাসআলা : ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মেলাতে ভুলে গেলে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা পড়ে নেবে। আর দুই রাকাতের কোনো এক রাকাতে সূরা মেলাতে ভুলে গেলে পরের যেকোনো এক রাকাতে সূরা মিলিয়ে নেবে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে যদি সূরা মেলানো না হয়, তবুও নামাজ আদায় হয়ে যাবে। আর সূরা মেলানো হোক বা না হোক উভয় ক্ষেত্রেই সাহু সিজদা আবশ্যক হবে। উল্লেখ্য, উঁচুস্বরে কেরাতবিশিষ্ট নামাজের কোনো রাকাতে ইমাম সূরা মেলাতে ভুলে গেলে শেষ দুই রাকাতের যে রাকাতে সূরা মেলাবে, ওই রাকাতের ফাতিহা ও সূরা উভয়টিই উঁচুস্বরে পড়বে।’ ফাতওয়া হিন্দিয়া, ১/১৮৮, বাদায়িউস সানায়ে, ১/৪০৫

উঁচুস্বরের স্থানে নিম্নস্বরে অথবা নিম্নস্বরের স্থানে উঁচুস্বরে কেরাত পড়া

মাসআলা : ইমাম সাহেব যদি ভুলে উঁচুস্বরে কেরাতের স্থানে তিন আয়াত পরিমাণ নিম্নস্বরে কেরাত পড়েন, অথবা নিম্নস্বরে কেরাতের বদলে তিন আয়াত পরিমাণ উঁচুস্বরে কেরাত পড়ে ফেলেন, তাহলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। আর একাকী নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি যদি উঁচুস্বরের স্থানে নিম্নস্বরে কেরাত পড়ে, তাতে অসুবিধা নেই। বিশুদ্ধ মতানুযায়ী একাকী নামাজ আদায়কারীর জন্য যোহর ও আসর নামাজে নিম্নস্বরে কেরাত পড়া ওয়াজিব। সুতরাং এ ক্ষেত্রে বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ কেরাত উঁচুস্বরে পড়লে তাকে সাহু সিজদা দিতে হবে।’ ফাতওয়া হিন্দিয়া, ১/১৮৮, বাদায়িউস সানায়ে, ১/৪০৫

Advertisements

Leave a Reply