কিডনিতে পাথর কেন হয় ? কিডনি রোগ নিরাময়ে ভেষজ উদ্ভিদ

0
307
কিডনিতে পাথর কেন হয় ? Why do kidney stones occur ?
কিডনিতে পাথর কেন হয় ? Why do kidney stones occur ?
Advertisements
Rate this post

কিডনিতে পাথর কেন হয় ? কিডনি রোগ নিরাময়ে ভেষজ উদ্ভিদ

মানবদেহের অতি প্রয়োজনীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে কিডনি অন্যতম। এটি কোমরের কিছুটা উপরের দুইপাশে দুটি কিডনি থাকে। পরিণত বয়সে ১টি কিডনি ১১-১৩ সেন্টিমিটার লম্বা, ৫-৬ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ৩ সেন্টিমিটার পুরু হয়। একটি কিডনির ওজন প্রায় ১৫০ গ্রাম। তবে ডান কিডনির চেয়ে বাম কিডনি একটু বড় ও কিছুটা উপরে থাকে। প্রতিটি কিডনি প্রায় ১২ লাখ নেফ্রন দিয়ে তৈরি। নেফ্রন হলো কিডনির কার্যকরী ও গাঠনিক একক। কোনো কারণে এগুলো নষ্ট হলে কিডনি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। আক্রান্তের ক্ষেত্রে সাধারণত একসঙ্গে দুটিই হয়ে থাকে।

পাথর কেন হয় Why do kidney stones occur 1

কিডনিতে পাথর কেন হয় ? কিডনি রোগ নিরাময়ে ভেষজ উদ্ভিদ

যেসব খাবারে কিডনি ভালো থাকে :

  • প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস (২ লিটার) বিশুদ্ধ পানি পান করা। তবে ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে বেশি পানি পান করা প্রয়োজন।
  • দানা বা বীজজাতীয় খাদ্য ব্রেড, নুডুলস, বাদাম ইত্যাদি বেশি বেশি খেতে হবে। সপ্তাহে অন্তত একটি কচি ডাবের পানি পান করুন। প্রতিদিন অন্তত চারটি থানকুনি পাতা খান। শসা, তরমুজ, লাউ, বাঙ্গি, কমলালেবু, লেবু, মাল্টা, ডালিম, বিট, গাজর, আখের রস, বার্লি, পিঁয়াজ, সজিনা ইত্যাদি পরিমাণমতো খেতে হবে।
  • ভেষজ উদ্ভিদ : গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায় এবং হাত-পায়ে পানি জমে, তারা নিয়মিত গোক্ষুর চূর্ণ ৩ গ্রাম মাত্রায় সেবন করলে মূত্রের পরিমাণ ঠিক হয়ে যায় এবং শরীরে জমে থাকা পানি বা ইউরিক এসিডের পরিমাণ কমে আসে। রক্তচন্দন কিডনি রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ। এটি প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বন্ধ করে এবং প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। পাথরকুচি পাতার নির্যাস কিডনি পাথর ধ্বংস করতে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
  • পুদিনা পাতা কিডনির পাথরের রোগ নিরাময়ের জন্য খুবই কার্যকর। যদি আপনি কিডনি পাথরের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে এক চামচ পুদিনার রসের সাথে মধু মিশিয়ে পান করুন। এভাবে কমপক্ষে ৬ মাস সকালে খেতে হবে।
  • কিডনির পাথরের চিকিৎসায় শাক হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট ভেষজ চিকিৎসা। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে শাক খেতে হবে। এভাবে প্রতিদিন শাক খেলে ভবিষ্যতে কিডনিতে পাথর জন্মানো প্রতিরোধ হবে।
  • কিডনির পাথরের চিকিৎসায় খাঁজকাটা পাতাবিশিষ্ট সিংহদন্তি হচ্ছে ধন্বন্তরি ভেষজ ওষুধ। সিংহদন্তির মূলে রয়েছে পটাশিয়াম, যা প্রস্রাব প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
  • কিডনির পাথরের চিকিৎসায় ডালিম খুবই উপকারী। ডালিমের পাতা দানা জুস একটি স্বাস্থ্যসম্মত জুস। সপ্তাহে এক দিন সকালে খালি পেটে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
  • কিডনিতে পাথর হওয়া বর্তমানে একটি সাধারণ রোগে পরিণত হয়েছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, এসিডিটি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ইউরিক এসিডের মতো রাসায়নিকের কারণে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হয়। তবে কিছু ভেষজ অর্থাৎ বনাজী ওষুধ সেবনে কিডনিতে পাথর নির্মূল করা সম্ভব হতে পারে।

কিডনি পাথর নিরাময়ে হোমিওপ্যাথি

প্রস্রাবে দ্রবীভূত ফসফেট, অক্সালেট, ইউরিক এসিড, ক্যালসিয়াম, ইউরেট প্রভৃতি পদার্থ থেকে গিয়ে মূত্রের সঙ্গে কিডনিতে দীর্ঘসময় অবস্থান করে। এভাবে দীর্ঘসময় অবস্থানের পর পাথরের আকার ধারণ করে এবং দিনে দিনে আরো বড় হতে থাকে। এক্স-রে পরীক্ষায় অনেক সময় ধরা না পড়লেও কিডনির ইউএসজি (আল্ট্রাসনোগ্রাফি) করলে পাথরের অবস্থান ধরা পড়ে।

কিডনিতে পাথর কেন হয় ? কিডনি রোগ নিরাময়ে ভেষজ উদ্ভিদ

Advertisements

রোগ লক্ষণাদি : কিডনি এলাকায় তীব্র ব্যথা (পিঠের দিকে) অনুভূত হয়। বেশি জোরে হাঁটাচলা বা ঝাঁকিতে ব্যথা বাড়ে। পাথর আপনা হতেই নিচের দিকে অর্থাৎ বের হওয়ার চেষ্টা করে তখন ব্যথা তীব্রতর হয় এবং কুচকি, পেটে ও লিঙ্গে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে। রোগী ঘামতে থাকে এবং বমি করে। ঘনঘন অল্পমাত্রায় তীব্র জ্বালাকর প্রস্রাব হয় এবং মূত্র বন্ধও হতে পারে। প্রচণ্ড শীত অনুভব এবং জ্বর আসে। রোগীর মুখে ফ্যাকাশে ভাব এবং অস্থিরতায় ভোগে, মূত্রের সাথে কখনো কখনো রক্তও আসতে পারে। কিডনির স্থানে টিপলে পিঠ ও তলপেটের মাংসপেশি শক্ত মনে হয়। ব্যথার তীব্রতা থেমে গেলেও রোগী ক্লান্ত হয়ে পড়ে।


হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান : কিডনি রোগে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ অত্যন্ত কার্যকরী। নিম্নে তা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।

  • প্রদাহ বা পাথুরীজনিত কিডনি শূল। কিডনি প্রদেশের প্রচণ্ড বেদনা ইউরেটার বাহিরে মূত্রস্থলীতে বিস্তৃত হয়। শ্বাস গ্রহণেও বৃদ্ধি। হঠাৎ মূত্রবেগ এবং মূত্র ত্যাগকালে জ্বালা ও মূত্রনালীর মধ্যে স্ফীতিবোধ। মূত্রের বর্ণ ঘোর এবং রক্ত বা কিডনির এপিথেলিয়াম এবং ইউরিক এসিড যুক্ত। রোগীর মুখমণ্ডল শুষ্ক ও ঘোর বর্ণে আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম ভালো ফলদায়ক।
  • তীব্র বেদনা মূত্রস্থলীর মধ্য দিয়ে পাদদেশ পর্যন্ত প্রবাহিত হলে বার্বেরিস নির্দিষ্ট।
  • কটিদেশে চাপবোধ। ঝাঁকনি লাগলে কিডনি ও কটিদেশে বেদনাবোধ। মূত্রস্থলীর মধ্যে পাথুরী। মূত্রস্থলী মধ্যে কুন্থনবেগ ও পুনঃ পুনঃ মূত্রবেগও নালীমধ্যে জ্বালাবোধে ক্যালকেরিয়া কার্ব ভালো কাজ দেয়। ক্যালকেরিয়া পাথুরী পীড়ার একটা প্রতিষেধক ওষুধ।
  • ক্যান্থারিস- কিডনি শুল নিবারণের পক্ষে এটি শ্রেষ্ঠ ওষুধগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি স্থানীয় উত্তেজনা হ্রাস করে বিনা ক্লেশে পাথুরী নির্গমনে সহায়তা করে।
  • বিন্দু বিন্দু মূত্রত্যাগ। মূত্রে শ্লেষ্মা ও লিথেটস এর আধিক্য। উভয় কিডনিতে ও মূত্রস্থলীতে অতীব্র, গভীর বেদনা ও জ্বালা যন্ত্রণাতে ইউপেটেরিয়াম পার্পিউরিয়াম ফলদায়ক।
  • মূত্র ত্যাগের পূর্বে কটিদেশে তীব্র বেদনা এবং তা মূত্র ত্যাগের পর উপশম। মূত্র ঘোলা, দুগ্ধবৎ এবং দুর্গন্ধময় তলানি যুক্ত। মূত্রমধ্যে পাথুরী নির্গমন ও প্রদাহে লাইকোপোডিয়াম ভালো কাজ দেয়।
  • মূত্রনালী মধ্যে তীব্র যন্ত্রণা এবং পাথুরী নির্গমনবৎ অনুভূতি ও যন্ত্রণার সময়ে বরফ পানের ইচ্ছা ও লিঙ্গমূলে আড়াআড়িভাবে কর্তনবৎ তীব্র বেদনায় মেডোরিনাম ব্যবহৃত হয়।
  • মূত্রে যদি অক্সালিক এসিড বর্তমান থাকে এবং এটিই যদি পাথুরীর প্রধান উপাদান হয় তবে কিডনিতে নাইট্রিক এসিড ব্যবহার্য। এ ছাড়া ক্যালকেরিয়া রিনালিস, এপিজিয়া রেপেন্স, এরিজেরন, নাক্সভমিকা, সার্সাপ্যারিলা, প্যারেরা ব্রেভা, সলিডেগো, ট্যাবাকাম, ডায়োস্কোরিয়া, ইকুইসেটাম, বেলেডোনা, বেজ্ঞায়িক এসিড উল্লেখযোগ্য। তারপরও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে ওষুধ সেবন করা উচিত।

কিডনিতে পাথর কেন হয় ? কিডনিতে পাথর: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ

তুলশী পাতা ও দুধ এর উপকারিতা

Tulsi or Tulasi Holy basil
image from @wiki

অধিকাংশ মানুষ জানে না যে, অসুখে নিয়মিত প্রাকৃতিক চিকিৎসা নিলে তা বেশ কার্যকর। সবচেয়ে বড় কথা হল প্রাকৃতিক ঔষুধের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।

আপনি কি জানেন তুলসী পাতায় অসংখ্য ঔষধি গুণ রয়েছে? তুলসী পাতা অনেক রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। যখন তুলশীর সঙ্গে দুধ মিলিত হয় তখন এটি একটি শক্তিশালী উপাদানে পরিনত হয়। যা বিভিন্ন রোগের মহাঔষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

* মাত্র ৩-৪টি তুলসী পাতা নিন। ভাল করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এবার গরম দুধে তুলসী পাতা ছেড়ে দিন। এরপর মিশ্রণটি দুধ ও তুলসী পাতা এক কাপে নিন। মিশ্রণটি রোজ সকালে খালি পেটে এক গ্লাস করে খাবেন।

কানে পানি ঢুকলে বের করতে যা করবেন

কিডনি পাথর দূর করে

দুধ ও তুলসী পাতার ইউরিনে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমিয়ে দেয়, যা কিডনি পাথর দূর করে। রক্তের ইউরিক এসিড-এর লেভেলকে কমতে সাহায্য করে কিডনিকে পরিষ্কার করে তুলসী পাতা। তুলসীর অ্যাসেটিক এসিড এবং এসেনশিয়াল অয়েল এর উপাদান গুলো কিডনির পাথর ভাঙতে সাহায্য করে ও ব্যাথা কমায়। কিডনির পাথর দূর করার জন্য প্রতিদিন তুলসী পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে হবে। এভাবে নিয়মিত ৬ মাস খেলে কিডনি পাথর দূর হবে। এ ছাড়া তুলসী কিডনিকে শক্তিশালী করে থাকে।

পাথরকুচির আশ্চর্য গুণাবলী

পাথর কুচি গাছের সাথে আমরা সকলেই কম বেশী পরিচিত। নানা রকশ ঔষধি গুনাগুন সমৃদ্ধ এ গাছের পাতা প্রাচীন কাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে চিকিৎসার ক্ষেত্রে। চলুন তাহলে আজ জেনে নেই পাথরকুচি গাছ ও এর নানা রমক ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে।

1024px Pinnata
image from wiki পাথরকুচি

কিডনির পাথর অপসারণে পাথরকুচি পাতাঃ পাথরকুচি পাতা কিডনি এবং গলব্লাডারের পাথর অপসারণ করতে সাহায্য করে। দিনে দুই বার ২ থেকে ৩ টি পাতা চিবিয়ে অথবা রস করে খান।

এছাড়াও

  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং মুত্রথলির সমস্যা থেকে পাথরকুচি পাতা মুক্তি দেয়।
  • শরীরের জ্বালা-পোড়া বা আর্থ্রাইটিস থেকে রক্ষা করে।
  • পাথরকুচি পাতা বেটে কয়েক ফোঁটা রস কানের ভেতর দিলে কানের যন্ত্রণা কমে যায়।
  • কলেরা, ডাইরিয়া বা রক্ত আমাশয় রোগ সারাতে পাথরকুচি পাতার জুড়ি নেই। ৩ মি.লি. পাথরকুচি পাতার জুসের সাথে ৩ গ্রাম জিরা এবং ৬ গ্রাম ঘি মিশিয়ে কয়েক দিন পর্যন্ত খেলে এসব রোগ থেকে উপকার পাওয়া যায়।
  • পাথরকুচি পাতার রসের সাথে গোল মরিচ মিশিয়ে পান করলে পাইলস্ ও অর্শ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

যারা পাথরকুচির গাছ চিনেন না

পাথরকুচি কোথাও কোথাও কফপাতা নামে পরিচিত। এর আরেকটি নাম পাটিয়াপুরি। হিন্দিতে জখমী হায়াৎ ও সংস্কৃতে পাষাণভেদ বলে।

প্রাকৃতিক উপায়ে নিজেই করুন সমাধান

যারা ছুরি-কাঁচির নাম শুনলেই ভয়ে গায়ে জ্বর আসে। তারা বিনা অপারেশনে কিডনি স্টোন থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তাদের জন্য রইল তরমুজ আর সেলারি বিচি দিয়ে তৈরি দু’টি প্রাকৃতিক উপায়।

  • আধ লিটার ফুটন্ত পানিতে এক টেবিল চামচ তরমুজের বিচি গুঁড়া করে মিশিয়ে দিন। ঠাণ্ডা হলে চায়ের মতো পান করুন।
  • একইভাবে এক টেবিল চামচ টাটকা সেলারি বীজ গুঁড়া করে বা কুঁচিয়ে আধ লিটার ফুটন্ত পানিতে মিশিয়ে দিন। ঠাণ্ডা হলে চায়ের মতো পান করুন।
  • যা রোজ একবার বা সপ্তাহে তিনবার পান করতে পারেন। দেখবেন দিন দিন ভালো হয়ে উঠছেন আপনি।

তবে গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে এটি করা যাবে না।

Advertisements

Leave a Reply