শিক্ষামূলক ইসলামিক গল্প – কাবাশরীফ ধ্বংশের পরিকল্পনাকারী হস্তীবাহিনীর ঘটনা

0
62
শিক্ষামূলক ইসলামিক গল্প - কাবাশরীফ ধ্বংশের পরিকল্পনাকারী হস্তীবাহিনীর ঘটনা
শিক্ষামূলক ইসলামিক গল্প - কাবাশরীফ ধ্বংশের পরিকল্পনাকারী হস্তীবাহিনীর ঘটনা
Advertisements
Rate this post

শিক্ষামূলক ইসলামিক গল্প – কাবাশরীফ ধ্বংশের পরিকল্পনাকারী হস্তীবাহিনীর ঘটনা

‘আবিসিনিয়া’র বাদশাহর পক্ষ থেকে ‘ইয়ামানে’ ‘আবরাহা’ নামক একজন শাসনকর্তা ছিল। সে দেখল, গোঠা আরবের লোকেরা মক্কার কাবা শরীফে হজ্জ করতে যায়। বিষয়টি তার মোটেও পছন্দ হলো না। তার ইচ্ছা হলো, মক্কার পরিবর্তে সবাই আমাদের দেশে আসুক। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যে সে ভাবল, কাবাগৃহের অনুকরণে আমাদের এখানেই একটি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন গীর্জা নির্মাণ করবে। তাতে বিনোদন ও চিত্তাকর্ষণের সব ধরনের উপায়-উপকরণ থাকবে। তা হবে সর্বোচ্চ জাকজমকপূর্ণ।

তাহলে মানুষ মক্কার সাদাসিধে সেই কাবা বর্জন করে মূল্যবান পাথরে সজ্জিত এই কাবার দিকে ছুটে আসবে। এতে মক্কার হজ্জ পর্বও বন্ধ হয়ে যাবে। সে এ উদ্দেশ্যে ইয়ামানের রাজধানী ‘সানআ’য় একটি কৃত্রিম কাবার ভিক্তি স্থাপন করে। সেখানে সে মন খুলে টাকা-পয়সা ব্যয় করে। কিন্তু এত কিছুর পরও মানুষ সে দিকে আকৃষ্ট হয়নি।

আরবরা, বিশেষ করে কুরাইশ গোত্রের লোকেরা যখন আবরাহার এ কৃত্রিম কাবা সম্পর্কে জানতে পারল, চরম উত্তেজিত হয়ে উঠল। একজন তো ঘৃণাভরে উক্ত কাবায় গিয়ে মলত্যাগ করে। কারো কারো মতে, আরবের একজন লোক আগুন জ্বালিয়েছিল। এক সময় ঐ আগুনের একটি স্ফুলিঙ্গ বাতাসের সঙ্গে উড়ে গিয়ে পড়ল ঐ ভবনে।

Advertisements

আবরাহা’ এতে ক্রুদ্ধ হয়ে কাবা শরীফকে ধূলিসাৎ করার শপথ করে। শপথ অনুযায়ী বিপুল সংখ্যক হাতি সংবলিত সৈন্যদল নিয়ে বাস্তবেই সে কাবা শরীফ ধ্বংস করার উদ্দেশ্য বের হয়। পথে আরবের যে গোত্র তার প্রতিরোধ করে, তাদের সাথে সে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং তাদের কে পরাজিত করে। নবীজির দাদা আব্দুল মুত্তালিব ছিলেন তখন কুরইশ গোত্রের নেতা এবং কাবা শরীফের মুতাওয়াল্লী। তিনি এ সংবাদ জানতে পেরে বললেন- ‘লোক সকল! তোমরা নিজেদেরকে রক্ষা করার ব্যবস্থা কর। কাবার মালিক-ই কাবাকে রক্ষা করবেন।’ আবরাহা পথ পরিস্কার দেখে বিশ্বাস করে নিল যে, এখন আর কাবা ধ্বংস করা কঠিন কাজ নয়। কারণ, সেদিক থেকে মোকাবেলা করার কেউ নেই।

শিক্ষামূলক ইসলামিক গল্প – ইসলামের বাস্তব কাহিনী | ইসলামিক বাস্তব গল্প পর্ব – ০১

আবরাহা যখন মক্কার নিকটবর্তী ‘মুহাস্সার’ উপত্যকার নিকট পৌঁছল, তখন সমুদ্রের দিকে থেকে হলূদ আর সবুজ রঙ্গের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পখির ঝাঁক আসতে দেখল। প্রতিটি পাখির ঠোঁটে ও পাঞ্জায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কঙ্কর ছিল। ঐ পখিগুলো সৈন্যদের উপর কঙ্করের বৃষ্টি বর্ষণ করতে লাগল। আল্লাহর কঙ্করজাতীয় সেই পাথরগুলো বন্দুকের গুলির চেয়েও বেশি কাজ করল। যারই গায়ে লাগত, একদিক থেকে প্রবেশ করে অপর দিক থেকে বের হতো। শরীরে এক আশ্চর্য ধরণের বিষাক্ত উপাদান রেখে যেত। তাতে অনেক সৈন্য ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। আর যারা পলায়ন করে, তারা মহা কষ্ট ভোগ করে মৃত্যু মুখে পতিত হয়।

এ ঘটনায় বিশেষ গায়েবী ইঙ্গিত হল, আল্লাহ তাআলা যেমন অলৌকিকভাবে তার ঘরের হেফাজত করেছেন, সে ঘরের সবচেয়ে পবিত্র মুতাওয়াল্লী এবং সবচেয়ে বড় পয়গম্বরের হেফাজতও তিনি ঠিক সেভাবেই করবেন। তাছাড়া তিনি খ্রিস্টান বা অন্য কোন ধর্মনায়কদেরকে কাবা এবং কাবার সত্য সেবকদের মূলোৎপাটন করার কখনো সুযোগ দেবেন না।

শিক্ষামূলক ইসলামিক ছোট গল্প – সূরা ফালাক ও নাসের এগারোটি আয়াতের তত্ত্ব

একবার নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠিন অসুখে পড়লেন। একরাতে স্বপ্নে দেখলেন, দুজন ফেরেশতা এসেছেন। একজন বসেছেন তাঁর শিয়রে, আর একজন পায়ের কাছে। দুজনের মধ্যে কথোপকথন শুরু হলো এভাবে- এঁর কী হয়েছে? ইনি অসুস্থ। কি অসুখ? যাদুগ্রস্ততা। কে যাদু করেছে? ইহুদি ‘লাবীদ ইবনে আসাম’। কীভাবে? চামড়ার ফিতায় যাদুমন্ত্র করে পাথর চাপা দিয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে অমুক কূপে। যাও সেটিকে বের করে আগুন দিয়ে জ্বলিয়ে দাও।

জানাজা নামাজের নিয়মাবলী | জানাযার নামাযের পদ্ধতি (হানাফী)

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘুম ভেঙ্গে গেলে। সকালবেলা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কয়েকজন সাহাবীকে কথিত কূপে পাথরচাপা দিয়ে রাখা যাদুকৃত ফিতাটি উদ্ধার করে আনতে বললেন। দেখাগেল, ফিতাটির মধ্যে একটি সূতা পেঁচানো রয়েছে। সুতাটিতে রয়েছে এসারাটি গিঁট। এ ঘটনার পেক্ষিতে সূরা ফালাক ও সূরা নাস অবতীর্ণ হয়েছে। সূরাদ্বয়ের আয়াত সংখ্যা এগারো। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি করে আয়াত পড়তে লাগলেন। সঙ্গে সঙ্গে খুলে যেতে লাগল একটি করে গিঁট। সূরা দুটি শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত গিঁট খুলে গেল। ওদিকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুস্থ হয়ে উঠলেন।

ইসলামিক অনুপ্রেরণামূলক গল্প – আল্লাহর দেয়া সম্পদ দান না করার করুণ পরিণতি

বিভিন্ন তাফসীরে উল্লেখ রয়েছে যে, ইয়েমেনের প্রদেশের কোন একটি বাগানের মালিক ছিল একজন আল্লাহভীরু লোক। সে বাগানের ফসলের নির্দিষ্ট একটি অংশ গরিব-মিসকিনগণকে দান করতঃ। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তার তিন পুত্র তার মালিক হলো। তারা ভাবল যে, আমাদের লোকসংখ্যা অনেক। আমাদের পরিবার-পরিজনের তুলনায় বাগানের ফসল সম্পদ খুবই অপ্রতুল। সুতরাং গরিব-মিসকিনগণকে ফসলের নির্দিষ্ট একটি অংশ দান করা আমাদের পক্ষে সম্ভব পর নয়; কিন্তু কোনো এক ছেলে এই চিন্তাধারার বিপরীত ছিল। সে গরিব-মিসকিনের প্রতি ছিল সহানুভূতিশীল। তবে তার কথায় অন্যান্যরা কান দিল না। তারা প্রতিজ্ঞা করল যে, আগামী দিন সকালবেলা আমরা ভিক্ষুকদল আসবার পূর্বেই গিয়ে ফসল কেটে আনবো; কিন্তু এ শপথ ও প্রতিজ্ঞায় আল্লাহর ইচ্ছাকে শমিল করল না।

শিক্ষামূলক ইসলামিক ছোট গল্প জানতে আমাদের সাথেই থাকুন

অর্থাৎ, তারা এ কথা বলল না যে, আল্লাহ চাইলে [ইনশাআল্লাহ] আমরা আগামীকল্য সকাল বেলা গিয়ে ফসল কেটে আনবো। এ ইনশাআল্লাহ না বলা এবং গরিব-মিসকিনগণকে না দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশের অপরাধে তাদের ঘুমে থাকা অবস্থায় আল্লাহ তাআলা তাদের বাগানের উপর গজব নজিল করলেন। ফলে প্রচন্ড মরুঝড়-বায়ু বাগানের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাগানের ফসলকে মথিত করে সম্পূর্ণরূপে বিনাশ ও ধ্বংশ করে ফেলল। বাগানটি দেখলে মনে হতো যে, মথিত হয়ে চর্বিত ফসলের ন্যায় হয়ে গেছে। অতঃপর অতি প্রত্যুষে তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল যে, তোমরা ফসল কাটতে চাইলে সকাল সকাল বাগনে চলো। ভিক্ষুকের দল ভিড় জমাবার পূর্বেই ফসল তুলে আনতে হবে। অতঃপর তারা পূর্ব সিদ্ধান্তমাফিক খুব দাম্ভিকতা ও অহংকারী মনে সকালবেলা ফসল কাটার জন্য রওয়ানা হলো। আর পরস্পর চুপে চুপে বলাবলি করতে লাগল- সাবধান! আজ যেন কোন প্রকারে তোমাদের কাছে ভিক্ষুকের দল ভিড় জমাতে না পারে।

তারা আসার পূর্বেই ফসল তোলার কাজ শেষ করতে হবে। ভিক্ষুক ও গরিবদেরকে তাড়িয়ে দেওয়ার মনোভাব নিয়ে তারা বাগানে পৌঁছল। বাগানের বিনাশ ও ধ্বংসযজ্ঞ অবলোকন করে বলল- আমরা পথ ভুলে হয়তো অন্য কোনো বাগানে এসেছি। আমাদের বাগানতো এটা নয়। আমাদের বাগান কত সুন্দর, সুজলা-সুফলা শস্যভরা, আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি, কিন্তু বাগানের চতুর্দিকের সীমানা ও আলামত দেখে তারা চেতনা ফিরে পেল। তাদের নিজেদের গর্ব-অহংকার ও আল্লাহর সাথে নাফরমানি করার কথা মনে হলো। আর বলল, আমাদের উপর আল্লাহর লানত এসেছে, আমাদেরকে ফসল হতে বঞ্চিত করা হয়েছে। তখন তাদের মধ্যে যে লোকটি স্বভাব-চরিত্রে উত্তম ছিল এবং ভিক্ষুকদের প্রতি সংবেদনশীল ছিল, সে বলল, আমি কি পূর্বে তোমাদেরকে আল্লাহর সাথে নাফরমানি না করার জন্য বলেছিলাম না? এটা আল্লাহর সাথে নাফরমানিকরণ, ভিক্ষুকগণকে বঞ্চিত করার ইচ্ছা এবং গর্ব-অহংকারের পরিণতি ছাড়া কিছুই নয়। এখনও সময় রয়েছে, গুনাহ হতে তওবা করো।

আল্লাহর মহিমা ঘোষণা এখনও কেন করছ না? সর্বহারা হওয়ার পরই তাদের বিভ্রান্তির দশা কাটল। তারা মনে মনে তওবা করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার মহিমা প্রকাশ করছি। আপনিই মহাশক্তিধর। আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমরা সীমালঙ্ঘণ করে ফেলেছি। ক্ষমা না করলে আমাদের আর কোনা উপায় নেই। অতঃপর তারা পরস্পর দোষারোপ করতে লাগল। পরিশেষে নিজেদের ভাগ্য বিড়ম্বনার জন্য নিজেদেরকেই দোষী সাব্যস্ত করল এবং বলল, এটা আল্লাহর সাথে বিদ্রোহমূলক আচরণের জন্যই হয়েছে। তারা আল্লাহর নিকট খাঁটি অন্তরে তওবা করে আশা করল যে, আল্লাহ মহা ও অতিশয় দয়ালু।

সুতরাং আমরা আশা করতে পারি যে, তিনি নিজগুণে আমাদের ক্ষমা করে এ বাগানের পরিবর্তে উত্তম বাগান আমাদেরকে দান করতে পারেন। আমরা আমাদের যাবতীয় সমস্যা তাঁর নিকট অর্পণ করলাম এবং তাঁর দিকেই মনোনিবেশ করলাম। তাফসীরকারগণ লিখেছেন- তাদের এই তওবার ফলে এবং নিজেদের যাবতীয় সমস্যা আল্লাহর নিকট সোপর্দকরণ এবং সত্যদীনের ধারক হওয়ার কারণে আল্লাহ তাআলা এটার তুলনায় অনেক অনেক গুণ উত্তম ও সুজলা-সুফলা শস্যভরা উদ্যান দান করে অপূর্ব সম্পদশালী করেছিলেন।

Advertisements

Leave a Reply