স্বামী স্ত্রী সহবাসের দোয়া ও নিয়ম

0
211
স্বামী স্ত্রী সহবাসের দোয়া ও নিয়ম
স্বামী স্ত্রী সহবাসের দোয়া ও নিয়ম
Advertisements
5/5 - (2 votes)

Table of Contents

স্বামী স্ত্রী সহবাসের দোয়া ও নিয়ম

পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে পারস্পরিক যৌন কার্যকলাপের মাধ্যমে প্রজনন ঘটে। বিবাহ হল বংশ বিস্তার করার বৈধ উপায়। বিয়ের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তৈরি হয়। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মেলামেশা বৈধ হয়ে যায়। এতে অনেক কল্যাণ রয়েছে এবং এটা সওয়াবের কাজ। আল্লাহ তায়ালা বিবাহের মাধ্যমে নারী-পুরুষের সহবাসকে বৈধ করেছেন এবং এর মাধ্যমে সন্তান-সন্ততির লাভের সুযোগ দিয়েছেন। বিবাহের ফলে স্বামী-স্ত্রীর সকল বৈধ কাজ কল্যাণ ও সওয়াবের কাজ হয়ে যায়। স্ত্রী সহবাস এর কিছু নিয়ম আছে যা আমাদের সকলের জানা দরকার।

স্বামী-স্ত্রী মিলনের আগে দোয়া পড়বেন কেন? সহবাসের দোয়া

দোয়া পড়া ইবাদত। তবে সে দোয়া প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশিত মতে হতে হবে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী সহবাসের আগে কেন দোয়া পড়বেন? এ দোয়া কি শুধুই সহবাসের নাকি নিরাপত্তার প্রিয়নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন স্বামী-স্ত্রীর মিলনের আগে দোয়া পড়তে বলেছেন? এর কারণই বা কী? আর এ দোয়ায় মানুষ কী বলে থাকেন? আসুন জেনে নেয়া যাক :

স্বামী-স্ত্রী মিলনের আগে যে দোয়া পড়তে হয়-
بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্বতানা।
অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার নামে (যৌন মিলন বা সহবাস) আরম্ভ করছি, তুমি আমাদের (স্বামী-স্ত্রী উভয়ের) কাছ থেকে শয়তানকে দূরে রাখ। আমাদের এ মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবেন, সে সন্তানকেও শয়তান (যাবতীয় আক্রমণ) থেকে দূরে রাখ।

স্বামী-স্ত্রীর যে বিষয়গুলো মনে রাখা জরুরি

শয়তান যৌনতাকে ভালোবাসে। লজ্জাস্থান দেখতেও ভালোবাসে। কেননা শয়তান এ যৌনতায় নিজেকে জড়িয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যেই স্বামী-স্ত্রীর মিলনের সময় সেখানে উপস্থিত হয়। যখনই কোনো মানুষ মিলনের সময় প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো এ দোয়া পড়ে, তখন সেখানে শয়তান থাকতে পারে না। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মিলন হয় নিরাপদ ও শয়তানের প্রভাবমুক্ত। এ যৌন মিলন তথা স্বামী-স্ত্রীর সহবাসে যদি সন্তান জন্ম নেয়, পরবর্তী জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এ সন্তান শয়তানের যাবতীয় প্রভাব থেকে নিরাপদ থাকে।

Advertisements

আরো পড়ুন-

আর এ দোয়া না পড়ে স্বামী-স্ত্রী মিলন করলে শয়তান সে মিলনে অংশগ্রহণ করে এবং স্বামী-স্ত্রীর মনে খারাপ সংকল্প তৈরি করে। যা দাম্পত্য জীবনে কলহ বয়ে আনে। আর সে মিলনে যদি কোনো সন্তান জন্ম নেয়, সে সন্তানও শয়তানের প্রভাবমুক্ত হতে পারে না। তাই শয়তানের প্রভাবমুক্ত পরিবার গড়তে স্বামী-স্ত্রী মিলনের আগে প্রিয়নবির শেখানো এ দোয়া পড়া আবশ্যক।

হাদিসে পাকে এসেছে- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ নিজ স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা করে তখন উক্ত দোয়া পড়ে যেন মিলিত হয়। এ মিলনের ফলে যদি তাদের কোনো সন্তান আসে, শয়তান সে সন্তানের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত)।

স্বামী-স্ত্রী মিলনের আগে দোয়া পড়া কিংবা তা জেনে নেয়া কোনো লজ্জার বিষয় নয়, বরং সুন্দর পরিবার গঠন ও বংশ বৃদ্ধির জন্য এটা একটা উত্তম পরিকল্পনাও বটে। কারণ যারা সহবাসে লিপ্ত হয় তারা এ কথা নিশ্চিতভাবে জানে না যে, কোন মিলনে সন্তান জন্ম নেবে। তাই প্রত্যেক মিলনের আগেই স্বামী-স্ত্রী এ দোয়া পড়ে নেবে। এ কারণেই হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-

যে ব্যক্তি সহবাসের ইচ্ছা করে তার নিয়ত যেন এমন হয় যে, আমি ব্যভিচার থেকে দূরে থাকবো। আমার মন এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াবে না আর জন্ম নেবে নেককার ও সৎ সন্তান। এই নিয়তে স্বামী-স্ত্রী মিলনে লিপ্ত হলে, তাতে সাওয়াব তো হবেই বরং সঙ্গে সঙ্গে তাদের নেক উদ্দেশ্যও পূরণ হয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব বিবাহিত দম্পতিকে মিলনের আগে প্রিয়নবির শেখানো দোয়া পড়ার মাধ্যমে শয়তানের যাবতীয় ক্ষতি থেকে হেফাজত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ইসলামে স্ত্রী সহবাসের নিয়ম

ইসলামে মানব জীবনের সকল বিধি-বিধান রয়েছে। স্বামী- স্ত্রীর যৌন মিলনের জন্যে সঠিক নিয়ম দেওয়া আছে। কিভাবে সহবাস করতে হবে, কিভাবে সহবাস করা হারাম, কখন সহবাস করা নিষিদ্ধ ইত্যাদি নিয়ম বা পদ্ধতিগুলো কুরআন এবং হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে। ইসলাম দাম্পত্য জীবনকে মধুর ও রোমান্টিক করতে উৎসাহিত করেছে।

সহবাসের শুরুতে নিয়ত করা

আরবিতে নিয়ত করতে হবে এমনটা নয়। নিয়ত মানে মনোস্থির করা। মনে মনে এই কামনা করা যে, আমি সাওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে সহবাস করবো। এর মাধ্যমে নিজেকে হারাম থেকে বিরত রাখবো এবং সন্তান লাভের আশা থাকবে। হাদিসে আছে, স্ত্রী সহবাসও সাদকা। এর মাধ্যমে সাওয়াব বা নেকি লাভ করা যায়।

সহবাসের সময় আদর-সোহাগ করা

ইসলামে স্বামী-স্ত্রীকে মিলনের সময় একে অপরকে আদর করতে বলা হয়েছে। এই আদর সোহাগকে হাদীসে উৎসাহিত করা হয়েছে। সহবাসকে যতটা সম্ভব মিষ্টি করার অনেক উপায় রয়েছে। স্বামী তার স্ত্রীকে চুম্বন, আলিঙ্গন, আদর ইত্যাদির মাধ্যমে আদর করবে, একইভাবে স্ত্রী তার স্বামীর যত্ন নেবে। এই ক্ষেত্রে, উভয়ের সাড়া দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একে অপরকে সহবাসের জন্য আগ্রহী করে তুলবে। দাম্পত্য জীবনে রোমান্টিক যৌনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি সম্পর্ককে আরও গভীর করে। অন্যথায় শয়তান খারাপ পথে নিয়ে যায় যা বিবাহ বিচ্ছেদের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

সহবাসের সময় দোয়া করা

শয়তান মানুষের রক্তের শিরা-উপশিরায় অবস্থান করতে পারে। এইজন্যে সহবাসের সময় দোয়া করতে হয়। স্বামী-স্ত্রী মিলনের আগে যে দোয়া পড়তে হয়-
بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্বতানা।
অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার নামে (যৌন মিলন বা সহবাস) আরম্ভ করছি, তুমি আমাদের (স্বামী-স্ত্রী উভয়ের) কাছ থেকে শয়তানকে দূরে রাখ। আমাদের এ মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবেন, সে সন্তানকেও শয়তান (যাবতীয় আক্রমণ) থেকে দূরে রাখ।

রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, এরপরে যদি তাদের দুজনের মাঝে কিছু ফল দেয়া হয় অথবা বাচ্চা পয়দা হয়, তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী ৪৭৮৭)

ইসলামে সহবাসের পজিশন

نِسَآؤُکُمۡ حَرۡثٌ لَّکُمۡ ۪ فَاۡتُوۡا حَرۡثَکُمۡ اَنّٰی شِئۡتُمۡ ۫ وَ قَدِّمُوۡا لِاَنۡفُسِکُمۡ ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّکُمۡ مُّلٰقُوۡہُ ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ
অর্থ- তোমাদের স্ত্রী তোমাদের ফসলক্ষেত্র। সুতরাং তোমরা তোমাদের ফসলক্ষেত্রে গমন কর, যেভাবে চাও। আর তোমরা নিজদের কল্যাণে উত্তম কাজ সামনে পাঠাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় তোমরা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে । আর মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও।(সূরা বাক্বারা-২২৩)

সহবাসের পদ্ধতি সম্পর্কে সরাসরি কোন বিধি নিষেধ নেই। দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, কাত হয়ে, সামনে থেকে, পিছন থেকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে সহবাস করা যাবে। তবে শর্ত হচ্ছে তা যৌনিপথে করতে হবে। কিছু বর্ণনায় স্বামী উপরে আর স্ত্রীকে নিচে থাকার কথা বলা হয়েছে। ইহা সুবিধাজনক ও প্রশান্তিদায়ক এবং উত্তম। তবে বাধ্যতামূলক নয়। আর স্ত্রী যদি উপরে থাকে আর স্বামী যদি নিচে থাকে এতে গুনাহের কিছু নেই। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে এই পজিশনে বীর্যপাত হলে বীর্য আটকে কষ্টের কারণ হতে পারে। পজিশনের কারণে সন্তান বিকলাঙ্গ হবে এ কথা ভিত্তিহীন। এ কথার ইসলামী শরিয়তে এবং বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নেই।

Read more islamic post

যেভাবে স্ত্রী সহবাস করা হারাম

ইসলামে স্ত্রীর সাথে পায়ুপথে সহবাস করা হারাম করেছে। হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি মলদ্বারে সঙ্গম করে আল্লাহ তার দিকে দয়ার দৃষ্টিতে তাকান না। পায়ুপথ বা মলদ্বারে সহবাস করে ফেললে গোনাহগার হবে। এইজন্যে তওবা করতে হবে। এছাড়াও পায়ুপথে সহবাস করলে রোগ ব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ইসলামে সহবাসের নিষিদ্ধ সময়

এমন কিছু সময় আছে যখন সহবাস করা হারাম। এই নিষিদ্ধ সময়(Prohibited time) সহবাস করলে গোনাহগার হবেন। ইসলাম এই সময়গুলোতে নিজেদেরকে সহবাস থেকে বিরত রাখার কথা বলেছে। কেউ যদি সঙ্গম করে ফেলে তার জন্য তওবা করতে হবে এবং কাফফারা আদায় করতে হবে।

১. স্ত্রীর মাসিকের সময়

স্ত্রী যখন ঋতুবতী অবস্থায় থাকে তখন যৌন মিলন করা যাবে না। তাই মাসিকের সময়(menstruation time) সহবাস করা হারাম।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন-
وَ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ الۡمَحِیۡضِ ؕ قُلۡ ہُوَ اَذًی ۙ فَاعۡتَزِلُوا النِّسَآءَ فِی الۡمَحِیۡضِ ۙ وَ لَا تَقۡرَبُوۡہُنَّ حَتّٰی یَطۡہُرۡنَ ۚ فَاِذَا تَطَہَّرۡنَ فَاۡتُوۡہُنَّ مِنۡ حَیۡثُ اَمَرَکُمُ اللّٰہُ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ التَّوَّابِیۡنَ وَ یُحِبُّ الۡمُتَطَہِّرِیۡنَ
অর্থ- আর তারা তোমাকে হায়েয(মাসিক) সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, তা কষ্ট। সুতরাং তোমরা হায়েযকালে স্ত্রীদের থেকে দূরে থাক এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হবে তখন তাদের নিকট আস, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালবাসেন এবং ভালবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে।(সূরা বাকারা- ২২২)
হাদিসেও এ ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া এসময় সহবাস করলে রোগ-ব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

২. রোজা থাকা অবস্থায়

২:১৮৭ اُحِلَّ لَكُمۡ لَیۡلَۃَ الصِّیَامِ الرَّفَثُ اِلٰی نِسَآئِكُمۡ ؕ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لِبَاسٌ لَّهُنَّ ؕ عَلِمَ اللّٰهُ اَنَّكُمۡ كُنۡتُمۡ تَخۡتَانُوۡنَ اَنۡفُسَكُمۡ فَتَابَ عَلَیۡكُمۡ وَ عَفَا عَنۡكُمۡ ۚ فَالۡـٰٔنَ بَاشِرُوۡهُنَّ وَ ابۡتَغُوۡا مَا كَتَبَ اللّٰهُ لَكُمۡ ۪ وَ كُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا حَتّٰی یَتَبَیَّنَ لَكُمُ الۡخَیۡطُ الۡاَبۡیَضُ مِنَ الۡخَیۡطِ الۡاَسۡوَدِ مِنَ الۡفَجۡرِ۪ ثُمَّ اَتِمُّوا الصِّیَامَ اِلَی الَّیۡلِ ۚ وَ لَا تُبَاشِرُوۡهُنَّ وَ اَنۡتُمۡ عٰكِفُوۡنَ ۙ فِی الۡمَسٰجِدِ ؕ تِلۡكَ حُدُوۡدُ اللّٰهِ فَلَا تَقۡرَبُوۡهَا ؕ كَذٰلِكَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ اٰیٰتِهٖ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ یَتَّقُوۡنَ ﴿۱۸۷﴾

অর্থ- সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের সাথে খিয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবূল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান কর।

আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। আর তোমরা মাসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না। এটা আল্লাহর সীমারেখা, সুতরাং তোমরা তার নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবেই আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্য স্পষ্ট করেন যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।(বাকারা-১৮৭)

রোজা থাকা অবস্থায় সহবাস করা হারাম। তবে রমজান মাসে রাত্রি বেলায় সহবাস করা যাবে। দিনের বেলায় সহবাস করা নিষিদ্ধ। ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ সঙ্গম করে ফেললে তাওবা করতে হবে এবং কাযা, কাফফারা আদায় করতে হবে। এছাড়াও যে সময় সহবাস করা নিষিদ্ধ। তা নিচে বর্নিত হলো –

• ইত্তেকাফের সময়,
• হজ্জের ইহরাম বাঁধা অবস্থায়,
• স্ত্রীর গর্ভপাতের ৪০ দিন সময় পর্যন্ত
উপরোক্ত সময়গুলো ছাড়া অন্যযেকোন সময় যৌন মিলন করা যাবে। এক্ষেত্রে পূর্ণিমা, আমাবস্যা, দিনের বেলা, শুক্রবার, ঈদের দিনে, ঈদের রাতে, শবে বরাতে, শবে কদরের রাতে ইত্যাদি সময় সহবাস করা যাবে এবং তা বৈধ বা হালাল। এতে কোনো ক্ষতি বা গোনাহ হবে না।

কোন কোন সময় স্ত্রী সহবাস নিসিদ্ধ? অমবশ্যা ও পূর্ণিমার রাত্রিতে সহবাস করা যায় কিনা। এ কথা কি ঠিক?

১। স্ত্রীর মাসিক অথবা প্রসবোত্তর খুন থাকা অবস্থায়। মহান আল্লাহ বলেছেন, “লোকে রাজঃস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। তুমি বল, তা অশুচি। সুতরাং তোমরা রাজঃস্রাবকালে স্ত্রীসঙ্গ বর্জন কর এবং যতদিন না তারা পবিত্র হয়, (সহবাসের জন্য) তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হয়, তখন তাদের নিকট ঠিক সেইভাবে গমন কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপ্রার্থীগণকে এবং যারা পবিত্র থাকে, তাঁদেরকে পছন্দ করেন।” (বাকারাহঃ ২২২)

২। রমযানের দিনের বেলায় রোযা অবস্থায়। মহান আল্লাহ বলেছেন, “রোযার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক।” (বাকারাহঃ ১৮৭)

৩। হজ্জ বা উমরার ইহরাম অবস্থায়। মহান আল্লাহ বলেন, “সুবিদিত মাসে (যথাঃ শাওয়াল, যিলক্বদ ও যিলহজ্জে) হজ্জ হয়। যে কেউ এই মাস গুলোতে হজ্জ করার সংকল্প করে, সে যেন হজ্জ এর সময় স্ত্রী সহবাস (কোন প্রকার যৌনাচার), পাপ কাজ এবং ঝগড়া বিবাদ না করে।” (বাকারাহঃ ১৯৭)

এ ছাড়া অন্য সময়ে দিবারাত্রির যে কোন অংশে সহবাস বৈধ। (মুহাম্মাদ স্বালেহ আল-মুনাজ্জিদ)

স্ত্রী সহবাসের পর ফরজ গোসলের নিয়ম

সহবাসের পর গোসল(Bath after sex) করতে হয়। এক্ষেত্রে কথা হচ্ছে বীর্যপাত হলে গোসল ফরজ। আবার বীর্যপাত ছাড়াও যদি স্ত্রীর লাজ্জাস্থানে সঙ্গম করা হয় তাহলেও গোসল ফরজ হয়ে যাবে। যৌন মিলনের পরেই দ্রুত গোসল করে নেওয়া উত্তম। পরে করলেও সমস্যা নেই। তবে নামাজের পূর্বে অবশ্যই গোসল করে নিতে হবে।এক্ষেত্রে ইসলামে ফরজ গোসলের নিয়ম পালন করতে হবে। এই গোসল স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
সহবাস স্বামী-স্ত্রীর মধু মিলন। স্বামী স্ত্রী উভয়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বুঝে যৌন মিলন করা উচিত। এক্ষেত্রে প্রত্যেক মুসলিমকে অবশ্যই ইসলামিক নিয়ম মানতে হবে। আল্লাহ পাক আমাদেরকে সঠিক নিয়মে সহবাস করার তৌফিক দান করুন। আমীন

গোসলের ফরজগুলো কি কি

গোসলের ফরজ ৩ টি। gosoler foroj যথাঃ- কুলি করা। উত্তমরূপে কুলি করার জন্য গড় গড়াসহ কুলি করতে হবে। তবে রোজা থাকা অবস্থায় গড় গড়া করার প্রয়োজন নেই।

নাকে পানি দেওয়া। নাকে এমনভাবে পানি দিতে হবে যেন নাকের নরম হাড় পর্যন্ত পানি যায়।সমস্ত শরীর ভালোভাবে ধৌত করা। শরীর এমনভাবে ধৌত করতে হবে যেন সুঁচ পরিমাণ জায়গা শুকনা না থাকে। যে ব্যক্তির উপর গোসল ফরজ হয়েছে তাকে অবশ্যই এই তিনটি শর্ত যথাযথভাবে পালন করতে হবে। অন্যথায় তার গোসল আদায় হবে না।

Resource:
কোন কোন সময় স্ত্রী সহবাস নিষিদ্ধ? অমবশ্যা ও পূর্ণিমার রাত্রিতে সহবাস করলে কি হয়?

সুরা বাকারা - ২:১৮৭
Advertisements

Leave a Reply